জুলাই অর্ডিন্যান্স কী?
জুলাই অর্ডিন্যান্স ছিল রাজা দশম চার্লস দ্বারা জারি করা চারটি আদেশের একটি সমূহ। যা ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ হয়ে ওঠে। ফরাসী জনগণ প্রতিক্রিয়াশীল পলিগন্যাকের পদচ্যুতির দাবি জানালে পলিগন্যাকের পরামর্শে রাজা এই অর্ডিন্যান্সগুলি জারি করেন।
পটভূমি
১৮২৪ সালে রাজা দশম চার্লস ফ্রান্সের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি রক্ষণশীল নীতি অনুসরণ করতেন এবং বিপ্লবী পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ছিলেন। তার প্রধান মন্ত্রী পলিগন্যাক ছিলেন একজন প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতিবিদ, যার প্রভাব রাজাকে আরও কঠোর ও প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ নিতে প্ররোচিত করে। ফ্রান্সের জনগণের মধ্যে এই কঠোর নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ছিল।
অর্ডিন্যান্সের বিবরণ
দশম চার্লস যে চারটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলেন সেগুলি নিম্নরূপ:
1. নবনির্বাচিত আইনসভা ভেঙে দেওয়া:
নবনির্বাচিত আইনসভা ভেঙে দিয়ে রাজা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সরাসরি আঘাত করেন। এটি জনগণের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে।
2. সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ:
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সীমিত করে রাজা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ প্রচারের অধিকারকে হরণ করেন। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।
3. ভোটাধিকার সংকুচিত করা:
ভোটাধিকার সংকুচিত করার মাধ্যমে রাজা সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সুযোগ হ্রাস করেন। এটি ছিল একটি প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপ যা জনগণের মধ্যে আরও অসন্তোষের জন্ম দেয়।
4. অষ্টাদশ লুই-এর ১৮১৪ খ্রিঃ সনদ বাতিল:
অষ্টাদশ লুই-এর ১৮১৪ খ্রিঃ সনদ বাতিল করার মাধ্যমে রাজা সংবিধানকে অবজ্ঞা করেন এবং তার ক্ষমতাকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা করেন।
5. নতুন নির্বাচনের আদেশ:
উপরোক্ত পদক্ষেপগুলির পরে রাজা নতুন নির্বাচনের আদেশ দেন যা ছিল একটি কৌশল জনগণের অসন্তোষকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব
জুলাই অর্ডিন্যান্সগুলি জারি হওয়ার পরপরই জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও প্রতিবাদের জন্ম হয়। প্যারিসের রাস্তায় জনতা নেমে আসে, ব্যারিকেড স্থাপন করে এবং রাজা ও তার নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এর ফলশ্রুতিতে মাত্র তিন দিন পরে (২৭-২৯ জুলাই, ১৮৩০) দশম চার্লস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং ফ্রান্সে জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়।
উপসংহার
জুলাই অর্ডিন্যান্সগুলি ছিল ফরাসী রাজতন্ত্রের প্রতিক্রিয়াশীল নীতির একটি স্পষ্ট উদাহরণ। এগুলি ফরাসী জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্ম দেয়, যা পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রের পতন ও ফ্রান্সে আরও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করে।
Tags: #Europe