জুলাই রাজতন্ত্র বলতে কী বোঝ?
জুলাই রাজতন্ত্র বলতে ফ্রান্সের সেই শাসনব্যবস্থাকে বোঝায় যা ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবের পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই রাজতন্ত্রটি অর্লিয়েন্স রাজবংশের লুই ফিলিপের অধীনে পরিচালিত হয়েছিল।
পটভূমি
১৮৩০ সালের জুলাই মাসে ফ্রান্সে রাজা দশম চার্লসের কঠোর নীতিমালা ও জুলাই অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে জনসাধারণের ব্যাপক অসন্তোষ এবং প্রতিবাদ শুরু হয়। মাত্র তিন দিনের বিদ্রোহের পরে দশম চার্লস সিংহাসন ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
লুই ফিলিপের উত্থান
জুলাই বিপ্লবের পরে ফ্রান্সের পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেয় যে অর্লিয়েন্স রাজবংশের লুই ফিলিপ ফ্রান্সের নতুন রাজা হবেন। লুই ফিলিপ তার পূর্বসূরিদের চেয়ে বেশি উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন এবং নিজেকে "ফরাসি জনগণের রাজা" হিসেবে পরিচয় করিয়েছিলেন।
জুলাই রাজতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য
জুলাই রাজতন্ত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল:
1. সাংবিধানিক শাসন:
লুই ফিলিপের অধীনে ফ্রান্স একটি সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেখানে রাজা এবং পার্লামেন্টের ক্ষমতা পৃথক ছিল। এই ব্যবস্থায় রাজা ছিল সীমিত ক্ষমতার অধিকারী এবং সংসদ ছিল আইন প্রণয়নের প্রধান কেন্দ্র।
2. উদারনীতির প্রসার:
লুই ফিলিপের শাসনামলে উদারনৈতিক নীতি ও সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রাখেন।
3. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক:
লুই ফিলিপের রাজত্বকালে ফ্রান্সের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থিতিশীল ছিল। তিনি অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের সাথে মিত্রতা ও শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট ছিলেন।
পতন
যদিও লুই ফিলিপের শাসনামলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হয়েছিল। তবে তার শাসনের শেষের দিকে আর্থিক সঙ্কট, সামাজিক অসন্তোষ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তার জনপ্রিয়তা কমে যায়। ১৮৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পরে লুই ফিলিপ সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং ফ্রান্সে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্রের সূচনা হয়।
উপসংহার
জুলাই রাজতন্ত্র ছিল একটি উল্লেখযোগ্য সময়কাল যা ফ্রান্সে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেছিল। যদিও এই শাসনব্যবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এটি ফ্রান্সের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়।
Tags: #Europe