সাতবাহন বংশের গুরুত্ব লেখ।

★★★★★
প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সাতবাহন বংশের গুরুত্ব অপরিসীম। তাদের শাসনামলে দাক্ষিণাত্যে রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা, বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ, সংস্কৃতির সমন্বয়

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে সাতবাহন বংশের গুরুত্ব অপরিসীম। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এই বংশ দক্ষিণ ভারতের বিশাল অঞ্চলে শাসন করেছে। তাদের শাসনামলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে, যা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

সাতবাহন বংশের গুরুত্ব: প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে তাদের অবদান

সাতবাহন বংশের গুরুত্ব

(ক) রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা

সাতবাহন বংশের অধীনে দাক্ষিণাত্যে রাষ্ট্রীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের শাসনকালেই প্রথমবারের মতো দক্ষিণ ভারত একক রাজনৈতিক সত্তায় একত্রিত হয়। এই ঐক্য দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন ক্ষুদ্র রাজ্য ও জনপদকে একত্রিত করে এবং একটি স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করে। 


(খ) বিদেশি আক্রমণ প্রতিরোধ

সাতবাহন বংশের শাসকগণ শক, যবন, এবং পহুব প্রভৃতি বিদেশি জাতির আক্রমণ থেকে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি রক্ষা করেন। বিশেষত শক ও যবনদের বিরুদ্ধে তাদের বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধ দক্ষিণ ভারতকে বিদেশি শাসনের হাত থেকে রক্ষা করেছে এবং ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছিন্নতা বজায় রেখেছে।


(গ) সংস্কৃতির সমন্বয়

উত্তর ভারতের আর্য সংস্কৃতি ও দক্ষিণ ভারতের দ্রাবিড় সংস্কৃতির মধ্যে সমন্বয় সাধন সাতবাহন বংশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এই সমন্বয়ের ফলে ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি এক নতুন রূপ লাভ করে এবং দেশজুড়ে একটি সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়। 


(ঘ) সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্নতি

সাতবাহন শাসনামলে সাহিত্য ও শিল্পকলার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়। এই বংশের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় বিভিন্ন সাহিত্যিক কাজ রচিত হয়। পাশাপাশি, আমরাবতীর বৌদ্ধ স্তূপ এবং অন্যান্য স্থাপত্যকর্মগুলির মাধ্যমে শিল্পকলার উন্নতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়।


উপসংহার

সাতবাহন বংশ প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। তাদের শাসনামলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সংস্কৃতির সমন্বয়, এবং সাহিত্য ও শিল্পকলার উন্নতি ঘটে, যা ভারতীয় সভ্যতার অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রাখে।

Tags:
Next Post Previous Post