কুষাণ যুগকে ধর্মীয় পুনরুত্থানের যুগ বলা হয় কেন?
প্রাচীন ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী কুষাণ সাম্রাজ্য খ্রিস্টীয় প্রথম থেকে তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক পুনরুত্থানের সময় হিসাবে পরিচিত। কুষাণ যুগে বৌদ্ধধর্ম, ব্রাহ্মণ্যধর্ম এবং জৈনধর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের সমন্বয় ঘটে। এই যুগে ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও সহনশীলতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয়।
কুষাণ যুগ ধর্মীয় পুনরুত্থানের যুগ
বৌদ্ধধর্মের উন্নতি
কুষাণ রাজারা, বিশেষত কনিষ্ক বৌদ্ধধর্মের প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন এবং বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কনিষ্কের শাসনামলে চতুর্থ বৌদ্ধ সঙ্গীতির আয়োজন করা হয়। যা বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন শাখার মধ্যে মতবিনিময় এবং সমন্বয়ের সুযোগ করে দেয়। এভাবে বৌদ্ধধর্ম কুষাণ যুগে নতুন জীবন লাভ করে এবং ভারতবর্ষের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত মধ্য এশিয়া এবং চীন পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণ্যধর্মের উন্নতি
যদিও কুষাণ রাজারা প্রধানত বৌদ্ধধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলেন, ব্রাহ্মণ্যধর্মও এই সময়ে উন্নতি লাভ করে। কুষাণ যুগে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান এবং দেবদেবীর পূজা চালু ছিল। কুষাণ যুগের মুদ্রা ও ভাস্কর্যে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের দেবদেবীর চিত্র অঙ্কিত ছিল, যা ব্রাহ্মণ্যধর্মের অব্যাহত প্রভাব নির্দেশ করে।
জৈনধর্মের উন্নতি
কুষাণ যুগে জৈনধর্মও উন্নতি লাভ করে। জৈনধর্মের বিভিন্ন শাখা ও সম্প্রদায় এই সময়ে সক্রিয় ছিল এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ ও সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়। কুষাণ শাসকরা জৈন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীল ছিলেন এবং তাদের ধর্মীয় কার্যকলাপ পরিচালনা করার স্বাধীনতা প্রদান করেন।
বহুধর্মীয় সহাবস্থান
কুষাণ যুগের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল ধর্মীয় সহনশীলতা এবং বহুত্ববাদ। কুষাণ মুদ্রায় গ্রিক, ইরাণী এবং ভারতীয় দেবদেবীর মূর্তি অঙ্কিত ছিল, যা বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রভাবের সমন্বয় নির্দেশ করে। কুষাণ শাসকরা বিভিন্ন ধর্মের প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন করতেন এবং ধর্মীয় বিভেদের পরিবর্তে ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনে উদ্যোগী ছিলেন।
উপসংহার
কুষাণ যুগকে ধর্মীয় পুনরুত্থানের যুগ বলা হয় কারণ এই সময়ে বৌদ্ধধর্ম, ব্রাহ্মণ্যধর্ম এবং জৈনধর্মের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটে। কুষাণ শাসকদের ধর্মীয় সহনশীলতা এবং পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এই যুগে বিভিন্ন ধর্মের সমৃদ্ধি ও প্রসার ঘটে, যা ভারতীয় উপমহাদেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়।
Tags: #Ancient