ব্যবহার সমতা ও দণ্ড সমতা কি ছিল?

★★★★★
সম্রাট অশোকের প্রবর্তিত ব্যবহার সমতা ও দণ্ড সমতা নীতি মৌর্য সাম্রাজ্যে সামাজিক সংহতি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই নীতিগুলি ব্রাহ্মণদের প্রভাব কম

সম্রাট অশোক মৌর্য সাম্রাজ্যের সংহতি বিধান এবং ব্রাহ্মণ শ্রেণীর প্রভাব খর্ব করার লক্ষ্যে দুটি বিশেষ বিধির প্রবর্তন করেন, যথা ১। ব্যবহার সমতা এবং ২। দণ্ড সমতা। এই বিধিগুলি সাম্রাজ্যের বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, এবং বর্ণের মানুষদের মধ্যে একতা প্রতিষ্ঠা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছিল।

vyavahar-samata-and-danda-samata

ব্যবহার সমতা:

ব্যবহার সমতা বলতে বোঝায় সকল নাগরিকের প্রতি সমান ব্যবহার। অশোক বিশ্বাস করতেন যে, সমাজের প্রতিটি সদস্যকে সমান মর্যাদা এবং অধিকার প্রদান করা উচিত। ব্যবহার সমতার মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে ভেদাভেদ দূর করা এবং সকলের মধ্যে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এর ফলে:

  • সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি: সকলের প্রতি সমান ব্যবহার সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস বাড়িয়েছিল।
  • ব্রাহ্মণ শ্রেণীর প্রভাব খর্ব: ব্রাহ্মণদের প্রভাব কমানোর মাধ্যমে সমাজে অন্যান্য গোষ্ঠীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
  • ন্যায়বিচার নিশ্চিত: সকল নাগরিকের প্রতি সমান ব্যবহার সমাজে ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠা করেছিল।


দণ্ড সমতা:

দণ্ড সমতা বলতে বোঝায় একই অপরাধের জন্য সকলের প্রতি সমান শাস্তি প্রদান। অশোক বিশ্বাস করতেন যে, আইন সবার জন্য সমান হওয়া উচিত এবং অপরাধের ক্ষেত্রে ভেদাভেদ করা উচিত নয়। দণ্ড সমতার ফলে:

  • ন্যায়বিচারের স্থায়িত্ব: একই অপরাধের জন্য সকলের প্রতি সমান শাস্তি প্রদান আইনের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়িয়েছিল।
  • অপরাধের হ্রাস: দণ্ড সমতা অপরাধীদের মধ্যে ভয় এবং প্রতিকারের নিশ্চিততা তৈরি করেছিল, যার ফলে অপরাধের হার কমেছিল।
  • সামাজিক শৃঙ্খলা:‌ সমান শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা এবং আইন-শৃঙ্খলা বজায় থাকত।


অশোকের প্রবর্তিত এই দুটি বিধি মৌর্য সাম্রাজ্যে সামাজিক ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল। এর ফলে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য বৃদ্ধি পেয়েছিল, ব্রাহ্মণ শ্রেণীর প্রভাব কমেছিল এবং সম্রাট অশোকের মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এই নীতিগুলি অশোককে একটি ন্যায়বিচারপ্রিয় এবং প্রজাবৎসল শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।

Tags:
Next Post Previous Post