শুঙ্গদের বংশ পরিচয় কি ছিল?

★★★★★
শুঙ্গ বংশের বংশ পরিচয় নিয়ে পাণিনি, কালিদাস এবং বৌদ্ধ গ্রন্থ দিব্যবদান-এর বিভিন্ন মতামত রয়েছে। শুঙ্গদের উত্থান এবং বংশ পরিচয় নিয়ে এই মতভেদগুলি নিয়ে...

শুঙ্গ বংশ প্রাচীন ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজবংশ ছিল, যা মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের পর ক্ষমতায় আসে। শুঙ্গরা খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫ অবধি শাসন করেছিল এবং তাদের রাজত্বকালে ভারতীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতার উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। তবে শুঙ্গ বংশের বংশ পরিচয় নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। প্রধানত তিনটি পৃথক মতামত বিদ্যমান, যা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং সাহিত্যিক উৎসের ভিত্তিতে গঠিত। এই মতামতগুলি নিচে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

শুঙ্গ বংশের বংশ পরিচয়: পাণিনি, কালিদাস ও বৌদ্ধ গ্রন্থের দৃষ্টিভঙ্গি

(ক) পাণিণির মতে:

পাণিণির মতে, শুঙ্গরা ব্রাহ্মণ ঋষি ভরদ্বাজের বংশ থেকে উদ্ভূত। ঋষি ভরদ্বাজ ছিলেন প্রাচীন ভারতের একজন বিখ্যাত ঋষি এবং তার বংশধরেরা শুঙ্গ নামে পরিচিত হন। এই মতে, শুঙ্গরা ছিলেন ব্রাহ্মণ এবং তাদের মধ্যে ধর্ম ও আচার পালনের প্রতি উচ্চ মর্যাদা ছিল।


(খ) কালিদাসের মতে:

প্রখ্যাত সংস্কৃত কবি কালিদাসের মতে, শুঙ্গরা ছিলেন কাশ্যপগোত্রের বৈশ্বিক বংশের লোক। কাশ্যপগোত্র প্রাচীন ভারতের একটি বিখ্যাত ব্রাহ্মণ গোত্র এবং বৈশ্বিক বংশ বলতে তাদের ঋষি কাশ্যপের বংশধর বোঝানো হয়েছে। এই মতে, শুঙ্গরা ছিলেন বৈশ্বিক ব্রাহ্মণ বংশের অন্তর্গত এবং তাদের মধ্যে উচ্চতর শিক্ষার প্রচলন ছিল।


(গ) বৌদ্ধ গ্রন্থের মতে:

বৌদ্ধ গ্রন্থ দিব্যবদান অনুসারে, পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশ থেকে উদ্ভূত ছিলেন। দিব্যবদান গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে পুষ্যমিত্র শুঙ্গ ছিলেন মৌর্য বংশের শেষ শাসক ব্রিহদ্রথ মৌর্যের সামন্ত। এই মতে, পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মৌর্য বংশের সাথে সম্পর্কিত হলেও তিনি একটি নতুন বংশ প্রতিষ্ঠা করেন এবং শুঙ্গ বংশ নামে পরিচিত হন।


এই তিনটি মতামতের মধ্যে প্রথম দুটি মতে শুঙ্গরা ব্রাহ্মণ বংশের অন্তর্ভুক্ত হলেও, তৃতীয় মতে শুঙ্গরা মৌর্য বংশের সাথে সম্পর্কিত ছিল। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক উৎস অনুযায়ী শুঙ্গ বংশের উত্থান এবং তাদের বংশ পরিচয় নিয়ে এই মতভেদগুলি লক্ষ্য করা যায়।

Tags:
Next Post Previous Post