বান্দুং সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করো।

বান্দুং সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা

স্বাধীনতা-উত্তর ভারতের অভ্যন্তরীণ নীতির পাশাপাশি বিদেশ নীতিরও প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কারণ এর ভৌগোলিক অবস্থান, যা সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। নিকটবর্তী দেশগুলি, দীর্ঘ ভূ-সীমান্ত এবং উপকূল ভারতকে স্থল ও নৌশক্তিতে শক্তিশালী হওয়ার প্রয়োজন দেখিয়েছে। দেশকে বাঁচানোর স্বার্থে ভারত অনেক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেছে প্রতিবেশী দেশের সাথে। বান্দুং সম্মেলন তারই একটা ক্ষুদ্রতম প্রয়াস।

বান্দুং সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
Bandung Conference

১৯৫৪ সালের ২৮শে এপ্রিল-২রা মে কলম্বোতে ভারত, পাকিস্তান, বার্মা, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া মিলিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার শাস্ত্রবিব জোজো (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, অ্যাফ্রো-এশিয়ার রাষ্ট্রগুলি নিয়ে একটি বৃহত্তর সমাবেশ হবে। ২৮শে ডিসেম্বর বাগোর অধিবেশনে কলম্বোয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও কমিউনিস্ট চীনের প্রধানমন্ত্রী একত্রিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন যে, অ্যাফ্রো- এশিয়ার ৩০টি দেশ নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর উদ্দেশ্য হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্যা ও যোগদানকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা। এই উদ্দেশ্যে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে, ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং-এ ১৯৫৫ সালে।


১৯৫৫ সালে বান্দুং সম্মেলন। ১৯৪৭-র দিল্লীতে 'এশিয়ান রিলেশানস কনফারেন্স' এর পরিণতি। প্রথমে এটি বেসরকারী হলেও পরে সরকারী প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠিত হয়। বান্দুং সম্মেলনের মতো একটি বৃহত্তর সমাবেশের দ্বারা অ্যাফ্রো-এশিয়ার দেশগুলির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের দৃষ্টি আকর্ষণ করার প্রচেষ্টা করা হয়। চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য দেশের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে গভীর আশাপ্রকাশ করে সম্মেলনের প্রতিনিধিরা।


১৯৫৫ সালের ১৮-২৬শে এপ্রিল ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং-এ অনুষ্ঠিত সম্মেলনে মোট ২৬টি অ্যাফ্রো-এশিয়ার দেশ মিলিত হয়। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিল ভারত। এর প্রধান ছিলেন তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু। বান্দুং সম্মেলনের গৃহীত উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য দশটি নীতি গৃহীত হয়। এই নীতিগুলি নিম্নরূপ:

  1. (i) সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখন্ডতা বজায় রাখতে হবে।
  2. (ii) কোনো রাষ্ট্র অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
  3. (iii) কোনো বড় একটা শত্রুর স্বার্থ পূরণের জন্য শক্তি সমবায়ে যোগ না দেওয়া।
  4. (iv) মৌলিক মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদে সংযোজিত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
  5. (v) একক বা যৌথভাবে প্রত্যেক দেশের প্রতিরক্ষার অধিকার প্রদান।
  6. (vi) জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমানাধিকার প্রদান।
  7. (vii) পারস্পরিক আক্রমণ না করা।
  8. (viii) আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতি ও দায়বদ্ধতা প্রদর্শন।
  9. (ix) আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান।
  10. (x) পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতা করা।


Related Short Questions

বান্দুং সম্মেলন কী ছিল?

বান্দুং সম্মেলন ছিল ১৯৫৫ সালে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলন যেখানে ২৬টি আফ্রো-এশীয় দেশ মিলিত হয়ে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করার জন্য আলোচনা করে।

বান্দুং সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

বান্দুং সম্মেলনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শান্তি ও সহযোগিতা স্থাপন করা।

কে বান্দুং সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিলেন?

বান্দুং সম্মেলনের প্রধান উদ্যোক্তা ছিল ভারত, এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু সম্মেলনের নেতৃত্ব দেন।

বান্দুং সম্মেলনে কতোটি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল?

১৯৫৫ সালের বান্দুং সম্মেলনে মোট ২৬টি আফ্রো-এশীয় দেশ অংশগ্রহণ করেছিল।

বান্দুং সম্মেলনের দশটি নীতি কী ছিল?

বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দশটি নীতি ছিল:
(i) সমস্ত রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা বজায় রাখা,
(ii) অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা,
(iii) বড় শত্রুর স্বার্থে শক্তি সমবায়ে যোগ না দেওয়া,
(iv) মৌলিক মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন,
(v) প্রতিটি দেশের প্রতিরক্ষার অধিকার,
(vi) জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমানাধিকার প্রদান,
(vii) পারস্পরিক আক্রমণ না করা,
(viii) আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতি ও দায়বদ্ধতা,
(ix) আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান,
(x) পারস্পরিক স্বার্থ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি।

বান্দুং সম্মেলনের মাধ্যমে পশ্চিমা শক্তিগুলোর উপর কী প্রভাব ফেলা হয়েছিল?

বান্দুং সম্মেলনের মাধ্যমে আফ্রো-এশীয় দেশগুলির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পশ্চিমা শক্তিগুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে গভীর আশা প্রকাশ করা হয়।

বান্দুং সম্মেলন কোন পূর্ববর্তী সম্মেলনের পরিণতি ছিল?

বান্দুং সম্মেলন ১৯৪৭ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত 'এশিয়ান রিলেশানস কনফারেন্স' এর পরিণতি ছিল। প্রথমে এটি বেসরকারীভাবে শুরু হলেও পরে সরকারী প্রচেষ্টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।

কলম্বোতে ১৯৫৪ সালের বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল?

১৯৫৪ সালের ২৮শে এপ্রিল থেকে ২রা মে কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, আফ্রো-এশিয়ার ৩০টি দেশ নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে এবং এর উদ্দেশ্য হবে সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্যা ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।

Tags:
Next Post Previous Post