মেগাস্থিনিসের সপ্তজাতিতত্ত্ব বলতে কি বোঝ?

★★★★★
মেগাস্থিনিস তার রচনায় প্রাচীন ভারতের সমাজকে পেশাভিত্তিক সাতটি জাতিতে ভাগ করেছেন - দার্শনিক, সৈনিক, পরিদর্শক, কৃষক, কারিগর ও শিল্পী, পশুপালক, এবং ...

মেগাস্থিনিস একজন গ্রিক রাষ্ট্রদূত ছিলেন, যিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের দরবারে এসেছিলেন এবং তার লেখায় প্রাচীন ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দিয়েছেন। তিনি ভারতীয় সমাজকে বর্ণভিত্তিক চারটি ভাগের পরিবর্তে পেশাভিত্তিক সাতটি ভাগে ভাগ করেছেন, যা সপ্তজাতিতত্ত্ব নামে পরিচিত।

মেগাস্থিনিসের সপ্তজাতিতত্ত্ব: প্রাচীন ভারতের পেশাভিত্তিক সমাজবিন্যাস

মেগাস্থিনিস তার রচনা "ইন্ডিকা" তে প্রাচীন ভারতীয় সমাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তার লেখায় তিনি উল্লেখ করেছেন যে ভারতীয় সমাজ মূলত পেশাভিত্তিক সাতটি ভাগে বিভক্ত ছিল। এই বিভাজন তিনি তৎকালীন বর্তমান বর্ণব্যবস্থার চারটি ভাগের থেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছেন।


মেগাস্থিনিসের সপ্তজাতিতত্ত্বের সাতটি জাতি

মেগাস্থিনিসের মতে, প্রাচীন ভারতের সমাজকে সাতটি পেশাভিত্তিক জাতিতে ভাগ করা যায়:

  • 1. দার্শনিক: এই শ্রেণির মানুষরা সমাজের জ্ঞানী ও বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন। তারা ধর্ম, নীতি ও দর্শনের শিক্ষা দিতেন।
  • 2. সৈনিক: এই শ্রেণির মানুষরা ছিলেন যোদ্ধা, যারা দেশের প্রতিরক্ষা ও যুদ্ধের দায়িত্ব পালন করতেন।
  • 3. পরিদর্শক: এরা রাজকর্মচারী ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতেন। সমাজের সুশাসন ও আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতেন।
  • 4. কৃষক: এরা সমাজের খাদ্য উৎপাদনের প্রধান উৎস ছিলেন। তারা জমি চাষ ও ফসল উৎপাদন করতেন।
  • 5. কারিগর ও শিল্পী: এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত ছিলেন কারিগর, শিল্পী ও অন্যান্য হস্তশিল্পী, যারা বিভিন্ন সামগ্রী ও পণ্য তৈরি করতেন।
  • 6. পশুপালক: এরা পশুপালন ও গবাদি পশু পালনের মাধ্যমে সমাজের পশুসম্পদ বৃদ্ধিতে অবদান রাখতেন।
  • 7. অমাত্য বা সচিব: এরা রাজদরবারের সচিব ও প্রশাসনিক কাজে নিযুক্ত ছিলেন।


উপসংহার

মেগাস্থিনিসের সপ্তজাতিতত্ত্ব প্রাচীন ভারতের সমাজব্যবস্থা ও পেশাভিত্তিক বিভাজন সম্পর্কে একটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে। এই তত্ত্ব সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষের ভূমিকা ও তাদের কাজের গুরুত্বকে তুলে ধরে। মেগাস্থিনিসের এই বিবরণ প্রাচীন ভারতের সমাজ ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিকতা ও সমৃদ্ধিকে বোঝার জন্য একটি মূল্যবান তথ্যসূত্র।

Tags:
Next Post Previous Post