ইউরোপের ইতিহাসে বলকান যুদ্ধের তাৎপর্য

★★★★★
বলকান যুদ্ধের ফলে অটোমান সাম্রাজ্য বলকান থেকে অপসারিত হয়, ইউরোপের শক্তি সাম্য ভেঙে পড়ে, এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি যেমন গ্রিস, বুলগেরিয়া, সাব্রিয়া, রোমানিয়া, মন্ট্রিনেগ্রো প্রভৃতির উপর তুরস্কের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে বলকান জাতিগুলির মতে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। তারা তুরস্কের কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় প্রথম বলকান যুদ্ধ এবং ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয় দ্বিতীয় বলকান যুদ্ধ। আন্তর্জাতিক ইতিহাসে এবং ইউরোপের রাষ্ট্রীয় বিন্যাসে এই দুটি বলকান যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

ইউরোপের ইতিহাসে বলকান যুদ্ধে তাৎপর্য

  1. প্রথমত: এই যুদ্ধের ফলে নিকট প্রাচ্য তথা বলকনাঞ্চল থেকে অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্য প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। হ্রেস ও অ্যাড্রিনোপল প্রভৃতি কয়েকটি ক্ষুদ্র অঞ্চল ছাড়া তুরস্ক বলকান অঞ্চল থেকে অপসারিত হয়।
  2. দ্বিতীয়ত: বলকান যুদ্ধের ফলে এই অঞ্চলের দেশগুলির পুনর্গঠন শুরু হয়। গ্রিস ও সাব্রিয়া শক্তিশালী হয়ে ওঠে। গ্রিসের সীমানা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার আয়তন বৃদ্ধি পায়।
  3. তৃতীয়ত: বলকানু যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ম্যাসিডোনিয়াকে নিয়ে বুলগেরিয়া এবং সাইবেরিয়ার মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব দেখা যায়। তাই বুলগেরিয়া জার্মানি নেতৃত্বে পরিচালিত ত্রিশক্তি জোটে যোগ দিতে বাধ্য করতে।
  4. চতুর্থত: বলকান অঞ্চল থেকে তুরস্ক অপসারিত হওয়ায় এই অঞ্চলে ইউরোপের শক্তি সাম্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এরই সুযোগে রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও অন্যান্য ইউরোপের বৃহৎ শক্তিবর্গ বলকার অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করতে অগ্রসর হয়।
  5. পঞ্চমত: বলকান অঞ্চলে নিজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য জার্মানি সেখানে অস্ট্রিয়ার প্রভাব বৃদ্ধি নীতিকে মেনে নেয়। এদের বিরোধিতা করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স।


পরিশেষে বলা যায় বলকান অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিকে কেন্দ্র করে যে সংঘাতের সূচনা হয় তা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ডেকে নিয়ে আসে। বলকান অঞ্চলের বসনিয়া প্রদেশের উপরে অস্ট্রিয়ার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করায় সাব্রিয়া অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয়। যার পরিণতি স্বরূপ দেখা যায় সেরাজেভা হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়। তাই বলা যায় বলকান অঞ্চলের শুরু হওয়া আঞ্চলিক সংঘাত পরবর্তীকালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেয়।

বলকান যুদ্ধ কী ছিল?

বলকান যুদ্ধ দুটি পৃথক যুদ্ধের সমন্বয়ে গঠিত ছিল যা ১৯১২ এবং ১৯১৩ সালে বলকান অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধে বলকান দেশগুলি অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল।

প্রথম বলকান যুদ্ধের কারণ কী ছিল?

প্রথম বলকান যুদ্ধের প্রধান কারণ ছিল বলকান অঞ্চলের দেশগুলির মধ্যে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ এবং অটোমান সাম্রাজ্যের শাসন থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা।

বলকান যুদ্ধের ফলে কি পরিবর্তন হয়েছিল?

বলকান যুদ্ধের ফলে অটোমান সাম্রাজ্য প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বলকান অঞ্চলের দেশগুলির পুনর্গঠন শুরু হয়। গ্রিস, সাব্রিয়া, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া তাদের সীমানা এবং ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

বলকান যুদ্ধ ইউরোপের শক্তি সাম্যতায় কী প্রভাব ফেলেছিল?

বলকান যুদ্ধের ফলে তুরস্কের অপসারণের কারণে ইউরোপের শক্তি সাম্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং রাশিয়া, অস্ট্রিয়া ও অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলি বলকান অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ পায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সাথে বলকান যুদ্ধের সম্পর্ক কী?

বলকান যুদ্ধের ফলে বলকান অঞ্চলে সংঘাত শুরু হয় যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। বিশেষ করে, সেরাজেভা হত্যাকাণ্ড, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়, বলকান অঞ্চলের আঞ্চলিক সংঘাতের পরিণতি ছিল।

Tags:
Next Post Previous Post