চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সাথে সেলুকাসের সম্পর্ক কেমন ছিল?

★★★★★
চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সেলুকাসের সম্পর্কের বিবর্তন, প্রাথমিক সংঘর্ষ থেকে কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ মৈত্রী নিয়ে আলোচনা।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সেলুকাসের সম্পর্ক প্রাথমিকভাবে বৈরী হলেও পরবর্তীতে কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সম্পর্কের বিবর্তন ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নে এই সম্পর্কের বিবিধ দিক আলোচনা করা হলো:

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য ও সেলুকাস, বৈরিতা থেকে মৈত্রী

১. প্রাথমিক সংঘর্ষ

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য যখন মৌর্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, তখন সেলুকাস নিখেটর মেসিডোনিয়ান রাজ্যর ভারতীয় অংশে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের উত্তরাধিকারী হিসেবে শাসন করছিলেন। দুই শক্তিশালী নেতার মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। সেলুকাস মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্তর-পশ্চিম অংশ দখল করার চেষ্টা করেন, যা চন্দ্রগুপ্তের শাসনের অধীনে ছিল। এই সংঘর্ষের ফলস্বরূপ দুই পক্ষে যুদ্ধ হয়।


২. শান্তি ও চুক্তি

এই যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সেলুকাস বুঝতে পারেন যে চন্দ্রগুপ্তের সামরিক শক্তি অনেক বেশি। ফলে, তারা শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ৩০৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় যেখানে সেলুকাস চন্দ্রগুপ্তের কাছে আরাকোসিয়া (বর্তমান দক্ষিণ আফগানিস্তান) ও গেদ্রোসিয়া (বর্তমান দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তান) সহ কিছু অঞ্চল সমর্পণ করেন।


৩. বৈবাহিক সম্পর্ক

চুক্তির অংশ হিসেবে সেলুকাস তার কন্যা হেলেনাকে চন্দ্রগুপ্তের সাথে বিয়ে দেন। এই বিবাহ কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করে তোলে এবং দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে।


৪. কূটনৈতিক উপহার

চুক্তির অংশ হিসেবে, চন্দ্রগুপ্ত সেলুকাসকে ৫০০ যুদ্ধহাতি উপহার দেন। এই যুদ্ধহাতি পরবর্তীতে সেলুকাসের সামরিক অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই উপহার কূটনৈতিক সৌজন্যের একটি উদাহরণ এবং দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে মৈত্রীর প্রতীক হিসেবে গণ্য হয়।


৫. মেগাস্থেনিসের আগমন 

চুক্তির পর, সেলুকাস তার দূত মেগাস্থেনিসকে চন্দ্রগুপ্তের দরবারে পাঠান। মেগাস্থেনিস তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ "ইন্ডিকা"-তে মৌর্য সাম্রাজ্যের সমাজ, সংস্কৃতি এবং রাজনীতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেন। মেগাস্থেনিসের এই বর্ণনা প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।


৬. দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব

চন্দ্রগুপ্ত এবং সেলুকাসের মধ্যে এই মৈত্রী সম্পর্ক দুই সাম্রাজ্যের স্থিতিশীলতা এবং শান্তি রক্ষা করতে সহায়তা করে। এর ফলে, উভয় সাম্রাজ্য নিজেদের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক বিষয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে পারে।


চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য এবং সেলুকাসের সম্পর্কের এই বিবর্তন দুই সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি কেবলমাত্র সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের পরিবর্তন নয়, বরং দুই শক্তিশালী সাম্রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতা ও মৈত্রীর একটি উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।

Tags:
Next Post Previous Post