ধম্ম প্রচারের জন্য অশোক কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন?

★★★★★
অশোক ধম্মপ্রচারের জন্য বিহারযাত্রা, অলৌকিক দৃশ্য প্রদর্শন, ধর্মমহামাত্র নিয়োগ, এবং দেশ-বিদেশে ধর্মপ্রচারক পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

মহামতি অশোক ছিলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক, যিনি তাঁর শাসনামলে শান্তি ও ন্যায়ের বাণী প্রচার করতে সচেষ্ট ছিলেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের বিভীষিকা দেখে তিনি বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাঁর সাম্রাজ্যে ধম্মপ্রচারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন। অশোকের এই উদ্যোগগুলি তাঁর শাসনামলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল এবং তা সমাজে নৈতিকতার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

অশোক ধম্মপ্রচারের জন্য বিহারযাত্রা, অলৌকিক দৃশ্য প্রদর্শন, ধর্মমহামাত্র নিয়োগ, এবং দেশ-বিদেশে ধর্মপ্রচারক পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

ধম্ম প্রচারের জন্য অশোকের উদ্যোগ

ধম্মপ্রচারের জন্য অশোকের গ্রহণ করা প্রধান উদ্যোগগুলি ছিল—

1. বিহারযাত্রা বা তীর্থস্থান ভ্রমণের প্রথা প্রবর্তন:

    অশোক বিহারযাত্রা বা ভ্রমণ রন্ধ করে ধর্মযাত্রা বা তীর্থস্থান ভ্রমণের প্রথা প্রবর্তন করেন। এর মাধ্যমে মানুষকে ধর্মীয় স্থানগুলি পরিদর্শনের মাধ্যমে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হতো।

2. অলৌকিক দৃশ্য প্রদর্শন:

    অশোক প্রজাদের মধ্যে ধর্মবোধ জাগ্রত করতে অলৌকিক দৃশ্যাদি প্রদর্শন করতেন। এর মাধ্যমে তিনি প্রজাদের মধ্যে ধর্মের প্রতি আগ্রহ ও বিশ্বাস সৃষ্টি করতে সচেষ্ট ছিলেন।

3. ধর্মমহামাত্র ও স্ত্রী ধর্মমহামাত্র নিয়োগ:

    অশোক ধম্ম প্রচারের জন্য ধর্মমহামাত্র এবং স্ত্রী ধর্মমহামাত্র নিয়োগ করেন। এই কর্মকর্তারা অশোকের নৈতিক শিক্ষার প্রচার এবং সমাজে ধর্মীয় আদর্শ স্থাপনে ভূমিকা রাখতেন।

4. প্রাদেশিক কর্মচারীদের নিয়োগ:

    অশোক প্রাদেশিক কর্মচারীদের (সূত, রাজুক) ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োগ করেন। এর ফলে তাঁর ধর্মীয় আদর্শ ও নৈতিক বিধির প্রচার পুরো সাম্রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত হয়।

5. দেশ ও বিদেশে ধর্মপ্রচারক পাঠানো:

    অশোক দেশে ও বিদেশে ধর্মপ্রচারক পাঠান। এর মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র তাঁর সাম্রাজ্যেই নয়, বরং অন্যান্য দেশে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করতে সচেষ্ট হন। এর ফলে বৌদ্ধ ধর্মের আন্তর্জাতিক প্রসার ঘটে।

6. বুদ্ধের বাণী ও স্তম্ভ ও শিলালেখে খোদাই:

    অশোক বুদ্ধের বাণী ও বিভিন্ন নৈতিক উপদেশ স্তম্ভ ও শিলালেখে খোদাই করে প্রচার করেন। এই খোদাইগুলি তাঁর সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়, যা জনগণের মধ্যে নৈতিক আদর্শের প্রচার করে।


উপসংহার

অশোকের ধম্ম প্রচারের উদ্যোগগুলি তাঁর শাসনামলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছিল। তাঁর এই প্রচেষ্টা শুধু তাঁর সাম্রাজ্যের নৈতিক উন্নতি সাধন করেনি, বরং বৌদ্ধ ধর্মের আন্তর্জাতিক প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অশোকের এই উদ্যোগগুলি আজও ইতিহাসে তাঁর শাসনের উচ্চমানের নৈতিকতার সাক্ষ্য বহন করে।

Tags:
Next Post Previous Post