ইয়াল্টা সম্মেলন সংক্ষেপে পর্যালোচনা করো।

ইয়াল্টা সম্মেলন: বিশ্ব রাজনৈতিক নীতির পরিবর্তন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্ব কোন্ আর্থিক ও রাজনৈতিক নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে তা যুদ্ধকালীন মিত্রশক্তি (আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স) বিভিন্ন কূটনৈতিক সম্মেলনে তা স্থির করার চেষ্টা করে। এই ধরনের একটি কূটনৈতিক সম্মেলন হল ইয়ান্টা সম্মেলন। ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, মার্কিন রাষ্ট্রপতি রুজভেন্ট এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিন ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় এই উদ্দেশ্যে মিলিত হন। এদের মধ্যে এই সম্মেলনটি 'ইয়াল্টা সম্মেলন' নামে খ্যাত।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী পরাজিত হলে ইয়াল্টা সম্মেলনে স্থির হয় মিত্রশক্তি জার্মানীকে চার ভাগে ভাগ করবে। বার্লিন হবে যৌথ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতো একটি যৌথ স্থায়ী আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠিত হবে বলে এই সম্মেলনেই স্থির হয়। সোভিয়েতের নিরাপত্তার জন্য পোল্যান্ড ও রাশিয়ার মধ্যে একটি 'বাফার' অঞ্চল করা হবে বলে স্থির হয়। পোল্যান্ডে একটি অস্থায়ী সরকার গঠিত হবে। একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করা হবে। সোভিয়েত পারে ওয়ারশসহ পোল্যান্ডের পূর্বাংশ। এছাড়া জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য রাশিয়া পায় পোর্ট আর্থার, কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ।


সোভিয়েত সেনাবাহিনী ক্রমেই জার্মানীর শক্তি ধ্বংস করে পূর্ব ইউরোপের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ভোটের সাহায্যে নির্বাচিত সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে উপেক্ষা করে তারা ক্রমেই কমিউনিস্ট শাসন চাপিয়ে দিতে থাকে। ফলে তারা পশ্চিমী শক্তিবর্গের কাছে আস্থা হারায়। সেহেতু সম্মেলনে স্থির হয় যে, বিশ্বের স্বাধীন রাষ্ট্রগুলি নিয়ে গঠিত হবে রাষ্ট্রপুঞ্জ তার জনা একটি নিরাপত্তা পরিষদ গঠিত হবে বলে স্থির হয়। এই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসাবে সোভিয়েত, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন ও চীনের ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা থাকবে। ব্রিটিশ ও সোভিয়েতের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়া রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপুঞ্জের ভোটাধিকার পাবে। স্টালিন এই ধরনের আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের বিপক্ষে ছিলেন। তবে বিশ্বের কথা চিন্তা করে তিনি তাঁর পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে স্বাক্ষর দানের জন্য বিশ্ব সম্মেলনে জাতিপুঞ্জের সদর-এ পাঠান। রুজভেল্ট এতে আশাবাদী ছিলেন। এতে তাঁর মনে হয়েছিল এই সংগঠনের দ্বারা শক্তিজোট ও সাম্য রাজনীতির প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।


১৯৪৫খ্রীঃ-এর ১১ই ফেব্রুয়ারি ইয়াল্টা সম্মেলন শেষ হয়। পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ মনে করে, যুদ্ধকালীন সময়ে যে মহাজোট তৈরি করা হয়, তা যুদ্ধ পরবর্তীকালেও বজায় থাকবে এবং এতে বিশ্বশান্তি স্থাপিত হবে। কিন্তু আদর্শগত কারণে মহাজোটের ভাঙন ধরে। শুরু হয় কথার লড়াই। ফলে সোভিয়েত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই পৃথক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে, যা ঠান্ডা লড়াই-এর সূচনা হিসাবে ধরা যায়।


ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয়?

ইয়াল্টা সম্মেলন ডাকার উদ্দেশ্যগুলি ছিল-

  • (১) জার্মানির ভবিষ্যত নির্ধারণ করা।
  • (২) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের মানচিত্রের পুনর্গঠন করা।
  • (৩) আন্তজার্তিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি আন্তজার্তিক সংগঠন তৈরী করা।
  • (৪) পোল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করা প্রভৃতি।

কবে কোথায় ইয়ান্টা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়?

১৯৪৫ খ্রিঃ ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরের তীরে ইয়াল্টা প্রদেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় বলে এই সম্মেলন ইয়াল্টা সম্মেলন নামে পরিচিত।

ইয়াল্টা সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম কী?

এই সম্মেলনের সদস্য রাষ্ট্রগুলি হল- মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল, রুশ রাষ্ট্রপতি স্ট্যালিন।

Tags:
Next Post Previous Post