১৮৩০ সালে জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব | ফলাফল | প্রভাব আলোচনা করো।
আপাতদৃষ্টিতে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে সংগঠিত জুলাই বিপ্লব ফ্রান্সের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
ঐতিহাসিক জ্যাক ড্রুজ লিখছেন, “...really the revolution was in no way inevitable.”(প্রকৃত অর্থে কোন দিক থেকেই বিপ্লব অনিবার্য ছিল না।)
কারণ ঐতিহাসিক কোবান মনে করেন, বিপ্লবীরা ছিলেন রক্ষণশীলতার সমার্থক। এমনকি বিপ্লবের আগুন কেবলমাত্র প্যারিসেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাদের লক্ষ্যের কোন স্থিরতা ছিল না। কেবল বংশগত রাজতন্ত্রের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রণিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই ছিল এদের লক্ষ্য।
তবে ঐতিহাসিক লিপসন মন্তব্য করেছেন, “ফ্রান্সের ইতিহাসে জুলাই বিপ্লব অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।” তাঁর মতে বিপ্লবের প্রভাব ফ্রান্সের সীমানা অতিক্রম করে ফ্রান্সের বাইরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
জুলাই বিপ্লবের গুরুত্ব
জুলাই বিপ্লবের ফলাফল ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ।
- প্রথমতঃ ঐতিহাসিক কর্ডন ক্রেইস বলছেন যে, দশম চার্লসের আমলে ফ্রান্সে যে স্বৈরাচার স্থাপনের চেষ্টা হয়েছিল জুলাই বিপ্লব তা ধ্বংস করে দিয়েছিল।
- দ্বিতীয়তঃ জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্রান্সের স্বৈরাচারী বুরর্বো রাজবংশের পতন ঘটে এবং অর্লিয়েন্স রাজবংশের অধীনে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দ্বারা রাজার দ্বৈব স্বত্ব অধিকার বাতিল হয় এবং প্রমাণিত হয় জনগণই প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
- তৃতীয়তঃ জুলাই বিপ্লব ভিয়েনা সম্মেলনে গৃহীত ন্যায্য অধিকারের উপর প্রবল আঘাত হানে। এই নীতির অসারতাকে প্রমাণ করে।
- চতুর্থতঃ ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লব প্রকৃতপক্ষে 1789 খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লবের পরিপূরক ছিল। জুলাই বিপ্লবের ফলেই সাম্য, ধর্মনিরপেক্ষ শাসন, ব্যক্তির স্বাধীনতা প্রভৃতি গণতান্ত্রিক নীতি ফ্রান্সের স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- পঞ্চমতঃ জুলাই বিপ্লবের ফলে যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায়ের প্রাধান্য স্থাপন এবং পুরাতন তন্ত্রের পুনঃস্থাপনের সমস্ত উদ্যোগ চিরতরে ব্যর্থ হয়। ধনী বুর্জোয়া সম্প্রদায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।
- ষষ্ঠতঃ জুলাই বিপ্লব শ্রমিক শ্রেণীর মধ্যে জাগরণ ঘটায়। বলা যায় আত্মশক্তি সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন করার ক্ষেত্রে জুলাই বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
পরিশেষে বলা যায়, জুলাই বিপ্লব ফ্রান্সের জনগণের চিন্তা জগতকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। সমসাময়িক লেখক ভিক্টর হুগো ও জর্জ স্ট্যান্ড “স্বাধীনতা ও শোষণ মুক্তির ঘোষণা” তাদের লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরেন যা বৌদ্ধিক জগতে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। সুতরাং আপাতদৃষ্টিতে ১৮৩০ সালের জুলাই বিপ্লবকে গুরুত্বহীন মনে হলেও এর ফলাফল ছিল সুদুরপ্রসারী।
জুলাই বিপ্লব কাকে বলে?
১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে ৩১ শে জুলাই ফ্রান্সের জনগণের চাপে পড়ে বুরর্বো বংশীয় রাজা দশম চার্লস সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং আন্দোলনকারীরা অর্লিয়েন্স বংশীয় লুই ফিলিপকে ফ্রান্সের রাজা হিসেবে গ্রহণ করেন। জুলাই মাসে পরিবর্তন হয়েছিল বলে একে "জুলাই বিপ্লব" বলা হয়।
জুলাই বিপ্লবের কারণ কী ছিল?
রাজা দশম চার্লসের জুলাই অধ্যাদেশ যা ভোটাধিকারের অধিকার সংকুচিত এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছিল।
3. জুলাই বিপ্লবের ফলাফল কী ছিল?
রাজা দশম চার্লসের পতন এবং লুই-ফিলিপের "নাগরিক রাজা" (Citizen King) হিসাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠান।
Tags: #Europe