মির কাশিম ও কোম্পানির বণিকদের সংঘাতের কারণ? বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার প্রভাব কী হয়েছিল?
মির কাশিম ও কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যাবসা
শাসনব্যবস্থা | সময়কাল |
---|---|
দ্বৈতশাসন | ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত |
ব্রিটিশ কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যাবসাবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সঙ্গে বাংলার নবাব মির কাশিমের বিবাদ শুরু হয়।
১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়রের কাছ থেকে ব্রিটিশ কোম্পানি যে ফরমান লাভ করেছিল তাতে শুধুমাত্র ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিনাশুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করেছিল। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাবসাতে এই ফরমান ব্যবহার করতে শুরু করে। এই প্রেক্ষিতে-
- 1. কোম্পানির বণিকদের বেআইনি ব্যাবসার ফলে বাংলার অর্থনীতি সমস্যার মুখে পড়ে।
- 2 কোম্পানির বণিকরা শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় নবাবের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দেয়।
- 3. দেশীয় বণিকরা শুল্ক দিতে বাধ্য হওয়ায় তারা ব্যাবসাতে অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়।
বাংলায় দ্বৈত শাসনব্যবস্থার প্রভাব
১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈতশাসন চলেছিল। বাংলায় দ্বৈতশাসনের প্রভাব ছিল ভয়াবহ।
1. আর্থিক শোষণ:
দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলায় কোম্পানি চরমভাবে অর্থ শোষণ করেছিল। ১৭৬৪-৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা। দেওয়ানি লাভের পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি বাংলায় রাজস্ব আদায় করেছিল ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।
2. অরাজকতা:
দ্বৈতশাসন বাংলাদেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ক করে। প্রশাসনে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ প্রজার নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি করে। সেইসঙ্গে কোম্পানির ইংরেজ কর্মচারীরাও বেনামিতে জমির র ইজারা নিয়ে প্রজাদের শোষণ শুরু করে।
3. ছিয়াত্তর মন্বন্তর:
দ্বৈত শাসনব্যবস্থার প্রভাবে বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়েছিল (১১৭৬ বঙ্গাব্দে বা ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে)। এই মন্বন্তর বা দুর্ভিক্ষে বাংলার এক-তৃতীয়াংশ লোক অনাহারে / প্রাণত্যাগ করেছিল।
এর ফলস্বরূপ বাংলার গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে দ্বৈত শাসনব্যবস্থার অবসান করেছিলেন।
পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর ইংরেজ কোম্পানি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে শক্তিশালী ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত করেছিল, তা পরিপূর্ণতা পায়। এরপর থেকে বাংলার রাজনীতি ও অর্থনীতি কোম্পানির অঙ্গুলি হেলনে চলতে থাকে।
### 1. ব্রিটিশ কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসা কেন বাংলার নবাব মীর কাশিমের সাথে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিল?
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি 1717 সালে সম্রাট ফররুখসিয়ারের কাছ থেকে শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। যাইহোক, কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্যের জন্য এই বিশেষাধিকার ব্যবহার করতে শুরু করে, যার ফলে বাংলার অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলার নবাব মীর কাশিমের সাথে বিরোধ দেখা দেয়।
### 2. বাংলায় দ্বৈত প্রশাসন ব্যবস্থা কীভাবে অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল?
1765 থেকে 1772 সাল পর্যন্ত বাংলায় দ্বৈত প্রশাসন ব্যবস্থার ফলে গুরুতর অর্থনৈতিক পরিণতি হয়েছিল:
- অর্থনৈতিক শোষণ: কোম্পানি বাংলার অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে শোষণ করেছে। কর রাজস্ব 1764-65 সালে 1 কোটি 13 লাখ থেকে 1765 সালে 2 কোটি 20 লাখে উন্নীত হয়।
- অনাচার: দ্বৈত শাসন অনাচারের পরিবেশের দিকে পরিচালিত করে, যেখানে প্রশাসনের দ্বৈততা জনগণের জন্য দুর্বলতা তৈরি করে। কোম্পানির কর্মকর্তারা জমির ইজারা অপব্যবহারসহ স্থানীয়দের শোষণ শুরু করে।
### 3. বাংলায় শাসনব্যবস্থায় দ্বৈততার পরিণতি কী হয়েছিল, বিশেষ করে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর সময় (১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দ বা ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দ)?
দ্বৈত প্রশাসনের প্রভাবের ফলে বাংলায় ছিয়াত্তর মন্বন্তর (1766 খ্রিস্টাব্দ বা 1770 খ্রিস্টাব্দের দুর্ভিক্ষ) দেখা দেয়:
- দুর্ভিক্ষ: দুর্ভিক্ষ বাংলার জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অনাহার এবং পরিত্যাগের দিকে পরিচালিত করে, যা একটি বিপর্যয়কর মানবিক সংকটকে চিহ্নিত করে।
- দ্বৈত প্রশাসনের সমাপ্তি: গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস 1772 সালে দ্বৈত প্রশাসনের অবসান ঘটান, এই অস্থির সময়ের সমাপ্তি চিহ্নিত করে।