পলাশির যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
যুদ্ধ (Battle) | সময়কাল (Time Period) |
---|---|
পলাশির যুদ্ধ (Battle of Plassey) | ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন (June 23, 1757 AD) |
বক্সার যুদ্ধ (Battle of Buxar) | ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে (1764 AD) |
সামগ্রিক ফলাফল ও গুরুত্বের বিচারে পলাশি যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধ ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব:
ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম।
ঐতিহাসিক স্মিথ বলেছেন যে, 'পলাশির যুদ্ধ ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল চূড়ান্ত বিজয়।'
1. ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বৃদ্ধি:
বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন বাংলার নবাব মির কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা এবং ভারতের মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। ফলে ভারতের রাজনীতিতে কোম্পানির ক্ষমতা ও মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
2. কোম্পানির দেওয়ানি লাভ:
বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ। বক্সারের যুদ্ধের সুবিধা লাভ করার জন্য বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ আগস্ট মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধিতে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা সম্রাটকে দেওয়ার বিনিময়ে কোম্পানি সুবা বাংলার দেওয়ানি অধিকার লাভ করে।
3. বাংলায় কোম্পানির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা:
বক্সারের যুপে জয়লাভের ফলে বাংলার নবাবের উপর কোম্পানি পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, বাংলার নবাব নামমাত্র শাসকে পরিণত হয়েছিলেন।
4. ইংরেজ বাহিনীর মর্যাদা বৃদ্ধি ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা:
বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে ভারতে ইংরেজ বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল। ফলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এইভাবে ক্রমশ ভারতে বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয়। তাই সব দিক থেকে বিচার করলে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে পলাশির যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধ ছিল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
### ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আধিপত্য বিস্তারে পলাশীর যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
1. বক্সারের যুদ্ধ কীভাবে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির শক্তি বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছিল?
বক্সারের যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বাংলার নবাব মীর কাসিম, আওধের নবাব সুজা-উদ-দৌলা এবং মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের পরাজয় ঘটে। ফলস্বরূপ, ভারতীয় রাজনীতিতে কোম্পানির প্রভাব ও কর্তৃত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
2. বক্সারের যুদ্ধ থেকে কোম্পানী কি লাভ অর্জন করেছিল?
বক্সারের যুদ্ধের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফলাফল ছিল কোম্পানির আঞ্চলিক লাভ এবং আর্থিক সুবিধা। 12 আগস্ট, 1765 সালে স্বাক্ষরিত এলাহাবাদের চুক্তির মাধ্যমে, গভর্নর-জেনারেল লর্ড ক্লাইভ মুঘল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে দেওয়ানি অধিকার সুরক্ষিত করেন, কোম্পানিকে সম্রাটকে বার্ষিক 26 লক্ষ টাকা প্রদানের জন্য বাংলায় সম্পূর্ণ রাজস্ব প্রশাসন প্রদান করেন।
3. বক্সার বিজয়ের ফলে কোম্পানি কীভাবে বাংলার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে?
বক্সারের বিজয়ের পর, কোম্পানি বাংলার উপর সম্পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করে, নবাবদেরকে তাদের শাসনের অধীনে নিছক ব্যক্তিত্বে পরিণত করে।
4. বক্সারের যুদ্ধ কীভাবে ভারতে ব্রিটিশ বাহিনীর মর্যাদা ও সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বৃদ্ধি করেছিল?
বক্সারের যুদ্ধে বিজয় ভারতে ব্রিটিশ বাহিনীর সামরিক শ্রেষ্ঠত্বকে দৃঢ় করে। ফলস্বরূপ, এটি ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব বৃদ্ধি করেছে, বাণিজ্য ও শাসনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মানদণ্ড স্থাপন করেছে।