সিরাজের সঙ্গে কোম্পানির বিরোধের কারণগুলি আলোচনা করো।
পলাশী : যে যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসকে বদলে দিয়েছে
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির প্রান্তরে বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তা ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধ নামে পরিচিত। বাংলার নবাব আলিবর্দি খানের মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠা কন্যা আমিনা বেগমের পুত্র সিরাজ উদ-দৌলা বাংলার নবাব হন (১৭৫৬ খ্রি.)। নবাব সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে বিভিন্ন কারণে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল এবং এই বিবাদের পরিণতি হিসেবেই পলাশির যুদ্ধ হয়েছিল।
পলাশির যুদ্ধ | ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ | বাংলার নবাব সিরাজ উদ-দৌলা ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে যে যুদ্ধ হয়েছিল, তা ইতিহাসে পলাশির যুদ্ধ নামে পরিচিত। |
পলাশির যুদ্ধের কারণ
🔴 ইংরেজ কোম্পানির ষড়যন্ত্র:
সিরাজ উদ-দৌলা যখন বাংলার নবাব হন তখন তার আত্মীয়স্বজনেরা তার বিরোধিতা করেছিলেন। সুযোগ বুঝে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সিরাজ-বিরোধী মি ঘসেটি বেগম ও সৌকত জঙ্গ-এর সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। সিরাজ উদ-দৌলা এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে ইংরেজ কোম্পানিকে উচিত শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন।
🔴 দুর্গ নির্মাণ সংক্রান্ত বিরোধ:
বাংলায় ইংরেজ এবং ফরাসি কোম্পানি দুর্গ নির্মাণ করে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল। নবাব সিরাজ উদ-দৌলা এই বিদেশি কোম্পানিগুলিকে দুর্গ নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিলে নবাবের নির্দেশ ফরাসিরা মেনে নেয়, কিন্তু সু ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তা অগ্রাহ্য করে। এর ফলে নবাব সিরাজ উদ-দৌলার সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
🔴 দস্তকের অপব্যবহার:
সর্বোপরি ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটে দস্তকের অপব্যবহারকে কেন্দ্র করে। মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়রের ফরমান অনুযায়ী শুধুমাত্র কোম্পানি দস্তক অর্থাৎ বিনাশুল্কে বাণিজ্যের ছাড়পত্র পেয়েছিল, কোম্পানির কর্মচারীরা নয়। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা এই সুযোগের অপব্যবহার করতে শুরু করলে সিরাজ ইংরেজদের উপর ক্ষুব্ধ হন।
🔴 কৃষ্ণদাস প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত বিরোধ:
ঘসেটি বেগমের প্রিয়পাত্র ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভের বিরুদ্ধে নবাবি তহবিল তছরূপের অভিযোগ ছিল। নবাব সিরাজ উদ-দৌলা মুর্শিদাবাদে এসে তাকে হিসাবপত্র দেখানোর নির্দেশ দেন। তখন দেওয়ান রাজবল্লভ তার পুত্র কৃষ্ণদাসকে প্রচুর ধনরত্নসহ কলকাতায় ইংরেজদের কুঠিতে পাঠিয়ে দেন। নবাব বারংবার কৃষ্ণদাসকে প্রত্যর্পণ করার নির্দেশ দিলেও ইংরেজরা নবাবের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে।
🔴 নবাবের দূতকে অপমান:
নবাবের সঙ্গে ইংরেজ কোম্পানির দুর্গ নির্মাণ, কৃন্নদাস প্রত্যর্পণ সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার জন্য নবাব নারায়ণ দাসকে দূত হিসেবে কলকাতায় পাঠান। ইংরেজরা নারায়ণ দাসকে অপমান করলে নবাব ইংরেজদের প্রতি ক্ষুব্ধ হন।
🔴 নবাবের প্রতি ইংরেজ কোম্পানির অপমানজনক আচরণ:
সিরাজ উদ-দৌলা বাংলার মসনদে বসার পর প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ফরাসি, ওলন্দাজ প্রমুখ বিদেশি বণিকরা প্রত্যেকেই তাকে অভিনন্দন জানায়। তারা প্রথা মেনে উপঢৌকন পাঠালেও ইংরেজরা ছিল এর ব্যতিক্রম। ফলে ইংরেজ কোম্পানির এই অপমানজনক ব্যবহার সিরাজকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
🔴 আলিনগরের সন্ধিভজ্ঞা:
এরপর নবাব সিরাজ উদ-দৌলা কলকাতা আক্রমণ ও দখল করেন। কলকাতার নাম রাখেন আলিনগর। এই সংবাদে রবার্ট ক্লাইভ ও ওয়াটসন মাদ্রাজ থেকে এসে কলকাতা পুনর্দখল করেন। যুদ্ধ না হয়ে দুপক্ষে আলিনগরের সন্ধি হয় (১৭৫৭, ৯ ফেব্রুয়ারি)। এর একটি শর্ত ছিল- নবাব ফরাসিদের সাহায্য করবেন না। কিন্তু চন্দননগরের ফরাসিরা মুর্শিদাবাদে আশ্রয়লাভ করে। ক্লাইভ তখন সন্ধিভঙ্গের অপরাধে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
অতঃপর ইংরেজরা নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মির জাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এবং ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশির যুদ্ধে সিরাজ উদ-দৌলাকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করে।
Related MCQ Question:
1. পলাশীর যুদ্ধ কত সালে সংঘটিত হয়?
- ক) 1757
- খ) 1857
- গ) 1657
- ঘ) 1957
2. পলাশীর যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?
- ক) সিরাজ উদ-দৌলা
- খ) মীর জাফর
- গ) আলীবর্দী খান
- ঘ) ভারতের ক্লাইভ
3. কোন ঘটনাটি সিরাজ উদ-দৌলা এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত করেছিল?
- ক) দুর্গ নির্মাণ নিয়ে বিরোধ
- খ) ট্রেডিং পারমিটের অপব্যবহার
- গ) সিরাজের আত্মীয়দের জড়িত ষড়যন্ত্র
- ঘ) ইংরেজদের দ্বারা সিরাজের প্রতি অসম্মান
4. পলাশীর যুদ্ধের সময় কোন ব্যক্তি সিরাজ উদ-দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন?
- ক) মীর কাসিম
- খ) আলীবর্দী খান
- গ) মীর জাফর
- ঘ) মীর কুতুব
5. পলাশীর যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?
- ক) সিরাজ উদ-দৌলার বিজয়
- খ) অচলাবস্থা
- গ) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয়
- ঘ) ইংরেজ বাহিনীর আত্মসমর্পণ
Tags: #Class 8 #পলাশির যুদ্ধ