মুর্শিদকুলি খান থেকে আলিবর্দি খানের সময় পর্যন্ত। বাংলার নবাবদের সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সম্পর্ক কীরকম ছিল?
বাংলায় ইউরোপীয় কোম্পানি: সপ্তদশ শতাব্দী থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসন
সপ্তদশ শতক থেকেই বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যাবসাবাণিজ্য করত। ১৭১৭ থেকে ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে ভারতে বাণিজ্যরত বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানির মধ্যে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল অন্যতম। বাংলার নবাবদের সঙ্গে এই কোম্পানির সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর, যদিও নবাব মুর্শিদকুলি খানের সময় থেকে নবাব আলিবর্দি খানের সময় পর্যন্ত ইউরোপীয় বণিকরা নবাবের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
নবাবদের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক
মুর্শিদকুলি খান:
অষ্টাদশ শতকের প্রথম থেকে বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তখন বাংলার নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খান। তিনি বাংলায় ইউরোপীয় বণিকদের ব্যাবসাবাণিজ্যে সর্বদা উৎসাহ দিতেন। এইসময় ইংরেজরা অন্যান্য বণিকদের তুলনায় বেশি সুযোগ নেওয়ার জন্য মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়রের ফরমান নিয়ে বিনাশুল্কে ব্যাবসাবাণিজ্য করত।এ ছাড়া দস্তকের অপব্যবহার করে কোম্পানির কর্মচারীরা বাংলায় তাদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য চালাতে থাকলে নবাবের অর্থনৈতিক স্বার্থও প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। তাই মুর্শিদকুলি খান অন্যান্য বণিকদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে ইংরেজদের বিশেষ অধিকার রদ করেন।
সুজাউদ-দিন (১৭২৭-১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দ):
১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব মুর্শিদকুলি খানের মৃত্যুর পর তার জামাতা সুজা উদ-দিন বাংলার মসনদে বসেন। ইউরোপীয় বণিকরা যাতে বাড়াবাড়ি করতে না পারে সেদিকে তিনি সজাগ দৃষ্টি রেখেছিলেন।
সরফরাজ খান (১৭৩৯-১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ):
সুজা উদ-দিনের মৃত্যুর পর সরফরাজ খান মাত্র কয়েক মাস নবাব পদে বসেছিলেন। তিনি ছিলেন অযোগ্য শাসক। ফলে শাসনকার্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে আলিবর্দি খান ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দে গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজকে পরাজিত ও নিহত করে বাংলার মসনদ দখল করেন।
আলিবর্দি খান (১৭৪০-১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দ):
নবাব আলিবর্দিও মুর্শিদকুলি খানের মতো বাংলায় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বণিকদের বাণিজ্যে আগ্রহী ছিলেন। আলিবর্দি বাংলার স্বার্থেই ইউরোপীয় বণিকদের পছন্দ করতেন। ইংরেজদের সম্পর্কে আলিবর্দি বলতেন, ইংরেজরা মৌমাছির জাত। তাদের যথাযথ পালন করলে মধু পাওয়া যাবে, আর বিরক্ত করলে হুল ফুটিয়ে দেবে। তবে অনেকসময় তিনি অর্থ আদায়ের জন্য ইউরোপীয় বণিকদের চাপ দিতেন। ইংরেজরাও নবাবের নির্দেশ মানতে বাধ্য হত।
অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে বাংলার ইংরেজ ও ফরাসি বণিকেরা যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করলে আলিবর্দি দূত পাঠিয়ে বলেন, 'তোমরা বণিক। তোমাদের দুর্গের কী প্রয়োজন? আমার রাজ্যে তোমরা নিরাপদ।' তবুও তিনি ইংরেজ নৌশক্তি সম্বন্ধে আতঙ্কিত ছিলেন। তিনি বলেন, 'সমুদ্রে আগুন জ্বললে নেভানোর ক্ষমতা আমার নেই।'
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফাররুখশিয়রের ফরমান বলে বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করলেও এইসব নবাবদের আমলে তা ভোগ করতে পারেনি। নবাবদের দৃঢ়তার জন্য অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের মতোই তারাও শুল্ক দিতে বাধ্য হয়, যদিও উৎসাহ প্রদান এবং সুসম্পর্কের অভাব হয়নি। পরবর্তীকালে সিরাজ উদ-দৌলার সময়ে নবারের সঙ্গে কোম্পানির সম্পর্ক তিক্ততার স্তরে পৌঁছোয়।
Related MCQ Question:
1. ১৭ ও ১৮ শতকে কোন ইউরোপীয় কোম্পানি বাংলায় বাণিজ্যে নিযুক্ত ছিল?
- ক) ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
- খ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
- গ) ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
- D) পর্তুগিজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
উত্তর: খ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
2. ১৮ শতকে ইউরোপীয় বণিকরা যখন তাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক শুরু করেছিল তখন বাংলার নবাব কে ছিলেন?
- ক) আলীবর্দী খান
- খ) সিরাজ উদ-দৌলা
- গ) মুর্শিদকুলি খান
- ঘ) সরফরাজ খান
উত্তর: গ) মুর্শিদকুলি খান
3. মুর্শিদকুলি খান ইংরেজ বণিকদের সাথে বাণিজ্যিক লেনদেন কীভাবে পরিচালনা করেছিলেন?
- ক) তিনি তাদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করেছিলেন।
- খ) তিনি ইংরেজ বণিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেন।
- গ) তিনি সম্পূর্ণরূপে তাদের বাণিজ্য অনুরোধ উপেক্ষা.
- ঘ) তিনি বাংলায় তাদের বাণিজ্য কার্যক্রম সীমিত করেন।
উত্তর: খ) তিনি ইংরেজ বণিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করেছিলেন।
4. কোন নবাব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন কিন্তু কখনও কখনও আর্থিক লাভের জন্য চাপ প্রয়োগ করেছিলেন?
- ক) আলীবর্দী খান
- খ) সিরাজ উদ-দৌলা
- গ) মুর্শিদকুলি খান
- ঘ) সরফরাজ খান
উত্তর: ক) আলীবর্দী খান
5. উল্লিখিত সময়কালে বাংলায় নবাবদের দেওয়া বাণিজ্যিক সুবিধার প্রতি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে সাড়া দিয়েছিল?
- ক) কোন প্রতিরোধ ছাড়াই নবাবের নির্দেশ মেনে চলল
- খ) তাদের বাণিজ্যিক অধিকার বজায় রাখার জন্য নবাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন
- গ) স্বেচ্ছায় অতিরিক্ত কর পরিশোধ করেছেন
- ঘ) কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই তাদের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে
উত্তর: খ) তাদের বাণিজ্যিক অধিকার বজায় রাখার জন্য নবাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন
Tags: #Class 8