বৈদিক যুগের বর্ণব্যবস্থার পরিচয় দাও।
বৈদিক যুগের বর্ণব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত পরিচয়
বৈদিক সমাজের চারটি বর্ণ:
সাধারণভাবে 'বর্ণ' বলতে বৈদিক সমাজের চতুর্বর্ণকে বোঝানো হয়। বৈদিক সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। এগুলিকে একসঙ্গে চতুর্বর্ণ বলা হত। যথা -
- ব্রাহ্মণ
- ক্ষত্রিয়
- বৈশ্য
- শূদ্র
ঋগ্বেদের পুরুষসূক্তে বলা হয়েছে যে, একটি আদর্শ সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা নিজের দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে এই চারটি বর্ণের সৃষ্টি করেছিলেন।
চতুর্বর্ণের উৎপত্তি:
ঋগ্বেদের পুরুষসূক্তের একটি শ্লোকে বলা হয়েছে যে, আদি পুরুষ ব্রহ্মার মুখমণ্ডল থেকে ব্রাহ্মণ, বাহুদ্বয় থেকে ক্ষত্রিয়, উরুদেশ থেকে বৈশ্য ও চারণযুগল থেকে শূদ্রের উৎপত্তি হয়েছে। উৎপত্তি অনুসারে সমাজে সবার উপরে ব্রাহ্মণদের এবং সবার নীচে শূদ্রের স্থান। অধ্যাপক শ্যামাচরণ দুবের মতে, চতুর্বর্ণের উৎপত্তি সংক্রান্ত এই ব্যাখ্যা চারটি বর্ণের সামাজিক অবস্থানের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।
কাজের ভিত্তিতে চতুর্বর্ণের বিভাজন:
বেদে চতুর্বর্ণের জন্য পৃথক পৃথক কাজেরও উল্লেখ করা হয়েছে। সেই অনুসারে-
- ব্রাহ্মণদের কাজ ছিল যাগযজ্ঞ, পূজার্চনা ও অধ্যয়ন-অধ্যাপনা করা।
- ক্ষত্রিয়দের কাজ ছিল দেশ শাসন ও দেশ রক্ষা করা।
- বৈশ্যদের কাজ ছিল ব্যাবসাবাণিজ্য, কৃষিকার্য ও পশুপালন করা।
- শূদ্রদের কাজ ছিল উপরোক্ত তিনটি শ্রেণির সেবা করা। ভৃত্য, কায়িক শ্রমজীবী ও কৃষকরা ছিল শূদ্র বর্ণের অন্তর্ভুক্ত।
ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যরা উপবীত ধারণ করতেন এবং এই সংস্কারকে তাঁদের দ্বিতীয় জন্ম বলে মনে করা হত। এজন্য তাঁরা 'দ্বিজ' নামে পরিচিত হতেন।
বর্ণভিত্তিক কিন্তু মুক্ত সমাজ:
অনেক ঐতিহাসিকের মতে, ঋবৈদিক যুগের সমাজ বন্ধ সমাজ ছিল না এক বর্ণ থেকে তখন অন্য বর্ণে যাওয়া যেত। গুণ ও কর্মের ভিত্তিতেই সমাজ চারটি বর্ণে বিভক্ত ছিল। সেই সময় চতুর্বর্ণ ব্যবস্থায় উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ ছিল না। অধ্যাপক বটোমোর বলেছেন যে, এক বর্ণ থেকে অন্য বর্ণের যাওয়ার সুযোগ সকলেরই ছিল। নিম্নবর্ণের কোনো ব্যক্তি তার যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলে উচ্চ বর্ণে উন্নীত হতে পারত। সমাজে অসবর্ণ বিবাহও স্বীকৃত ছিল। কিন্তু অধ্যাপক এন. কে. দত্তের মতে, বর্তমান হিন্দুধর্মে যেমন বংশানুক্রমিকতাকে স্বীকার করা হয়, সেই রকমই বৈদিক সমাজেও ব্রাহ্মণের সন্তান ব্রাহ্মণ্য পেশায় এবং শূদ্রের সন্তান শূদ্রের পেশায় দক্ষ হয় বলে মনে করা হত।
বৈদিক যুগে পঞ্চম শ্রেণির পরিচয়:
বৈদিক চতুর্বর্ণ কাঠামোর বাইরেও অন্ত্যজ ও অস্পৃশ্য বহু মানুষ বাস করত। তারা মুচি, মেথর ও অন্যান্য নীচু কাজে নিয়োজিত হত। এই শ্রেণিকে অধ্যাপক শ্যামচরণ দুবে সমাজের পঞ্চম শ্রেণি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
বৈদিক যুগে বর্ণ থেকে জাতির উদ্ভব:
ইতিহাসবিদ ড. এ. এল. ব্যাসাম মনে করেন যে, ঋগ্বেদিক যুগে 'বর্ণ' বলতে কখনোই 'জাতি'-কে বোঝাত না। 'বর্ণ' ও 'জাতি' দুটি পৃথক সত্তা। কিন্তু তা সত্ত্বেও বর্ণ ও জাতি প্রথার মধ্যে একটি যোগসূত্র আছে এবং জাতিভেদপ্রথার উদ্ভবে বর্ণপ্রথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করা হয়। বৈদিক যুগের প্রথমদিকে চতুর্বর্ণকে ভিত্তি করে অল্প কয়েকটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব থাকলেও পরবর্তীকালে নতুন নতুন পেশার সৃষ্টি হলে পুরোনো বর্ণভিত্তিক জনগোষ্ঠীগুলি থেকেই নতুন নতুন জনগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। এই পুরোনো ও নতুন জনগোষ্ঠীগুলিই এক-একটি 'জাতি' হিসেবে গণ্য হতে থাকে।
ঋগ্বেদিক যুগের বর্ণপ্রথা থেকে পরবর্তীকালে যে জাতিব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে তা আরও পরবর্তীকালে ভারতীয় সমাজে বিভিন্ন মিশ্রজাতির জন্ম দেয়। ফলে বৈদিক সমাজের চতুর্বর্ণপ্রথার বিশুদ্ধতা পরবর্তী বিভিন্ন যুগে লোপ পায় এবং তা ক্রমে জাতিগত সমন্বয়ের পথ প্রস্তুত করে।
1. বৈদিক যুগে "বর্ণ" এবং "জাতি" এর মধ্যে সম্পর্ক কী?
ক) তারা সমার্থক পদ।
খ) তাদের কোন সংযোগ নেই।
গ) "বর্ণ" এর উদ্ভবকে প্রভাবিত করেছে।
ঘ) "জাতি" "বর্ণের উদ্ভবকে প্রভাবিত করে।"
উত্তর: গ) "বর্ণ" "জাতির উদ্ভবকে প্রভাবিত করেছে।"
2. বৈদিক যুগে, মানুষকে "বর্ণ" এ শ্রেণীবদ্ধ করার প্রাথমিক ভিত্তি কি ছিল?
ক) জন্ম ও পেশা
খ) আঞ্চলিক পরিচয়
গ) কথ্য ভাষা
ঘ) ধর্মীয় বিশ্বাস
উত্তর: ক) জন্ম ও পেশা
3. বৈদিক যুগে "বর্ণ" এর চারটি প্রধান শ্রেণী কি কি ছিল?
ক) শহর, শহর, গ্রাম, বন
খ) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র
গ) উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম
ঘ) ধনী, দরিদ্র, শাসক, শ্রমিক
উত্তর: খ) ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র
4. কীভাবে বৈদিক সমাজ সময়ের সাথে সাথে "বর্ণ" এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে?
ক) এটি কোন পরিবর্তন ছাড়াই স্থির ছিল।
খ) বিবর্তিত পেশার কারণে নতুন "+" গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে।
গ) "বর্ণ" পরবর্তী সময়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
ঘ) বৈদিক যুগে কোন "বর্ণ" শ্রেণী ছিল না।
উত্তর: খ) বিবর্তিত পেশার কারণে নতুন "বর্ণ" গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে।
5. "বর্ণ" এবং "জাতি"-এর মধ্যে ঋগ্বেদের তাৎপর্য কী?
ক) এটি "জাতি" ধারণার প্রবর্তন করেছে।
খ) এটি অনমনীয় "বর্ণ" সিস্টেমকে সংজ্ঞায়িত করেছে।
গ) এটি তাদের বিবর্তন বোঝার একটি উৎস।
ঘ) এটি "বর্ণ" এবং "জাতি উভয়কেই প্রত্যাখ্যান করেছে।"
উত্তর: গ) এটি তাদের বিবর্তন বোঝার একটি উৎস।
6. কীভাবে "বর্ণ" সম্পর্কে বৈদিক সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি সময়ের সাথে বিকশিত হয়েছে?
ক) "বর্ণ" থেকে "জাতি" শ্রেণীবিন্যাস।
খ) অনমনীয় থেকে নমনীয় শ্রেণীতে।
গ) "জাতি" থেকে "বর্ণ" অনুক্রম।
ঘ) দৃষ্টিভঙ্গির কোন বিবর্তন ছিল না।
উত্তর: খ) অনমনীয় থেকে নমনীয় শ্রেণীতে।
7. বৈদিক যুগে একজনের "বর্ণ" নির্ধারণে পেশা কী ভূমিকা পালন করেছিল?
ক) "বর্ণ" এর উপর এর কোন প্রভাব ছিল না।
খ) "বর্ণ" এর একমাত্র মাপকাঠি ছিল পেশা।
গ) পেশা এবং জন্ম উভয়ই একটি ভূমিকা পালন করেছে।
ঘ) পেশা শুধুমাত্র "জাতি" এর জন্য প্রাসঙ্গিক ছিল।
উত্তর: গ) পেশা এবং জন্ম উভয়ই ভূমিকা পালন করেছে।
8. কীভাবে "বর্ণ" ধারণাটি ভারতীয় সমাজে পরবর্তী বিকাশকে প্রভাবিত করেছিল?
ক) এটি সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে গেছে।
খ) এটি অপরিবর্তিত ছিল।
গ) এটি বর্ণপ্রথায় অবদান রেখেছিল।
ঘ) এটি রাজ্যগুলির বিভাজনের দিকে পরিচালিত করেছিল।
উত্তর: গ) এটি বর্ণ প্রথায় অবদান রাখে।
9. বৈদিক যুগে "বর্ণ" এবং "জাতিভেদপ্রথা" এর মধ্যে সম্পর্ক কী?
ক) তারা সমার্থক পদ।
খ) "বর্ণ" দ্বারা "জাতিভেদপ্রথা।"
গ) তারা সম্পূর্ণ সম্পর্কহীন।
ঘ) "জাতিভেদপ্রথা" দ্বারা "বর্ণ।"
উত্তর: খ) "বর্ণ" দ্বারা "জাতিভেদপ্রথা।"
10. বৈদিক সমাজে "বর্ণ" এবং "জাতি" বিকশিত হওয়ার প্রভাব কী ছিল?
ক) এটি সামাজিক সমতা প্রচার করেছে।
খ) এটি বৃহত্তর বৈচিত্র্য এবং জটিলতার দিকে পরিচালিত করে।
গ) এর ফলে সমাজের অবক্ষয় ঘটে।
ঘ) সমাজে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
উত্তর: খ) এটি বৃহত্তর বৈচিত্র্য এবং জটিলতার দিকে পরিচালিত করে।
Tags: #Class 11 History Chapter 6