অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় | ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা - প্রশ্ন ও উত্তর

অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় | ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা - প্রশ্ন ও উত্তর 

Class VIII History Chapter 4 |  Establishment of Colonial Authority - Questions and Answers

 ১। ঠিক শব্দটি বেছে নিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করো : 

ক) চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন – (হেস্টিংস/ কর্নওয়ালিস / ডালহৌসি)।

খ) মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। (বাংলায়/ উত্তর ভারতে / দক্ষিণ ভারতে)।

গ) ‘দাদন' বলতে বোঝায় – (অগ্রিম অর্থ/ আবওয়াব / বেগার শ্রম)।

ঘ) ঔপনিবেশিক ভারতে প্রথম পাটের কারখানা চালু হয়েছিল – (রিষড়ায়/ কলকাতায়/ বোম্বাইতে)।

ঙ) দেশের সম্পদ দেশের বাইরে চলে যাওয়াকে বলে – (সম্পদের বহির্গমন/ অবশিল্পায়ন/ বর্গাদারি ব্যবস্থা)।

২। নীচের বিবৃতিগুলির কোনটি ঠিক কোনটি ভুল বেছে নাও : 

ক) ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়। ❌ ১৭৯৩

খ) নীল বিদ্রোহ হয়েছিল মাদ্রাজে।❌ বাংলা

গ) দাক্ষিণাত্যে তুলো চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিষয় জড়িত ছিল। ✅

ঘ) রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল।❌ বিদেশি

ঙ) টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা কোম্পানি-শাসনের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল।✅

৩। অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০- ৪০টি শব্দ ) :

ক) ‘সূর্যাস্ত আইন’কাকে বলে?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুসারে প্রতি জমিদার বছরের নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করতে পারলে তবেই জমিদারী স্বত্ব ভোগ করতে পারেতো। অন্যথা তার জমিদারী কোম্পানী বাজেয়াপ্ত করত। এই আইন 'সূর্যাস্ত আইন' নামে পরিচিত ছিল।

খ) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বোঝো?

ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে ভারতীয় কৃষকরা শুধুমাত্র নিজেদের প্রয়োজন ছাড়া বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক পণ্য যেমন ধান, গম, আখ প্রভৃতি চাষ করতে শুরু করেন। প্রয়োজনভিত্তিক এই কৃষি উৎপাদন বাণিজ্যভিত্তিক প্রয়োজনে পরিণত হয়। বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে এই কৃষিকাজকে কৃষির বাণিজ্যকরণ বলে।

গ) দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা কেন হয়েছিল?

কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের নেতিবাচক প্রভাবের ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ভাগে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের শ্রমিক প্রভাবে কার্পাস তুলোর চাহিদা বেড়ে গিয়েছিল। তার ফলে দাক্ষিণাত্যে কার্পাস তুলোর অন্যত চাষ বেড়ে যায়। কিন্তু (1) আমেরিকার গৃহযুদ্ধ থেমে যাওয়ার পর দাক্ষিণাত্যে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ তুলোর দাম একদম কমে যায়। তার উপরে চড়া হারে রাজস্বের চাপ ছিল কৃষকের উপর। (2) সেই সময় খরা ও অজন্মার ফলে কৃষকসমাজ চূড়ান্ত দুর্দশার মুখে পড়েছিল। (3) সেই দুর্দশার সুযোগ নিয়েছিল স্থানীয় সাকার মহাজনেরা। সাকারেরা চাষিদের ঋণ দেওয়ার বিনিময়ে উৎপন্ন ফসলের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করত। এর বিরুদ্ধে দাক্ষিণাত্যের তুলো চাষিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সাহুকারদের আক্রমণ করে। তাদের দখলে থাকা কাগজপত্রগুলি পুড়িয়ে দেয় বিদ্রোহী চাষিরা। আহমদনগর ও পুনা জেলায় বিদ্রোহ তীব্র আকার নিয়েছিল। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলা ঐ বিদ্রোহকে ঔপনিবেশিক প্রশাসন ‘দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা” নাম দিয়েছিল।

ঘ) সম্পদের বহির্গমন কাকে বলে?

পলাশির যুদ্ধের পর বিশেষত কোম্পানীর দেওয়ানী লাভের পর কোম্পানী ও তার কর্মচারীরা বৈধ ও অবৈধ উপায়ে সমগ্র অষ্টাদশ শতক জুড়ে বাংলা থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ জলস্রোতের মতো ইংল্যান্ডে পাঠায়। অর্থনীতিবিদ ও ঐতিহাসিকরা সম্পদের এই বহির্গমনকে সম্পদের বহির্গম বা Economic Drain বলে অভিহিত করেছেন। অর্থনীতিবিদ অম্লান দত্ত একে আর্থিক অপহার বলে উল্লেখ করেছেন।

ঙ) অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো?

পলাশির যুদ্ধের পরবর্তী কোম্পানী শোষণ, অসম শুল্ক নীতি, ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব, ভারতীয় বণিকদের মূলধনের অভাব প্রভৃতি কারণে বাংলার চিরাচরিত কুটীর- শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনা অবশিল্পায়ন বা De-Industrialisation নামে পরিচিত। এর ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে শিল্প নির্ভরতার পরিবর্তে কৃষি নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়।

৪। নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১৬০টি শব্দ) : উত্তরগুলি সাজিয়ে গুছিয়ে লেখ। ভাষাগত ত্রুটির জন্য দুঃখিত!

ক) বাংলার কৃষক সমাজের উপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয়?

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, যা জমিদারি প্রথা নামেও পরিচিত, ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা বাংলায় প্রবর্তন করা হয়। এটি বাংলার কৃষক সমাজে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল, যার সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ:

 1. জমির মালিকানা কেন্দ্রীকরণ: 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কিছু ধনী জমিদারের (ভূমিস্বামী) হাতে জমির মালিকানা কেন্দ্রীভূত হয়। জমিদাররা ব্রিটিশ সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠে, যার ফলে ক্ষমতার উল্লেখযোগ্য ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। জমির মালিকানার এই কেন্দ্রীকরণের ফলে কৃষকদের শোষণ করা হয়, কারণ জমিদাররা উচ্চ খাজনা আদায় করে এবং কঠোর শর্ত আরোপ করে।

 2. কৃষকদের দরিদ্রতা: 

জমিদারদের জন্য ব্রিটিশদের দ্বারা নির্ধারিত রাজস্বের দাবি কৃষকদের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। জমিদাররা, তাদের রাজস্বের বাধ্যবাধকতা পূরণের প্রয়োজনে চালিত, প্রায়ই খাজনা বৃদ্ধি করে এবং কৃষকদের উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে। এর ফলে দারিদ্রতা বৃদ্ধি পায়, কারণ কৃষকরা তাদের বাধ্যবাধকতা পূরণের জন্য সংগ্রাম করে এবং অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়।

 3. ঐতিহ্যগত অধিকারের ক্ষতি: 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকরা পূর্বে ভোগ করা ঐতিহ্যবাহী অধিকার এবং প্রথাগত প্রথা হারিয়ে ফেলে। জমিদাররা, এখন তাদের নতুন মালিকানা দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত, কৃষকদের জমি ব্যবহার, চাষ পদ্ধতি এবং অন্যান্য অনুশীলনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। কৃষকরা তাদের সাধারণ জমি এবং বনের প্রথাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, তাদের কষ্টকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

 4. কৃষি উৎপাদনশীলতা হ্রাস: 

জমিদাররা, প্রাথমিকভাবে রাজস্ব আহরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত, কৃষি উন্নয়নে বা অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য প্রণোদনার অভাব ছিল। ফলে অনেক এলাকায় কৃষি উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়েছে। কৃষকরা ক্রেডিট, আধুনিক চাষাবাদের কৌশল এবং সম্পদ অ্যাক্সেস করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল, যা তাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

 5. ঋণগ্রস্ততা এবং ভূমিহীনতা: 

জমিদারদের দ্বারা আরোপিত উচ্চ খাজনা এবং কর প্রায়ই কৃষকদের ঋণের মধ্যে ঠেলে দেয়। তাদের বাধ্যবাধকতা মেটানোর জন্য তারা মহাজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদের হারে টাকা ধার করতে বাধ্য হয়েছিল, যার ফলে একটি ঘৃণার চক্র শুরু হয়। ঋণ পরিশোধে অক্ষমতার কারণে কখনো কখনো জমি হারানো হতো এবং পরবর্তীতে কৃষকদের ভূমিহীন হয়ে পড়তে হতো।

 6. সামাজিক অস্থিরতা এবং কৃষক বিদ্রোহ: 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থার অধীনে কৃষকদের অভিযোগ সামাজিক অস্থিরতা এবং ঘন ঘন কৃষক বিদ্রোহের দিকে পরিচালিত করে। সাঁওতাল বিদ্রোহ (1855-1856) এবং নীল বিদ্রোহ (1859-1860) হল জমিদার এবং ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের অত্যাচারী প্রথার বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিরোধের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

 সংক্ষেপে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা বাংলার কৃষক সমাজে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল। এটি জমির মালিকানার কেন্দ্রীকরণ, কৃষকদের দারিদ্রতা, ঐতিহ্যগত অধিকার হারানো, কৃষি উৎপাদনশীলতা হ্রাস, ঋণ, ভূমিহীনতা এবং সামাজিক অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করে। এই পরিণতিগুলি কৃষকদের জন্য ইতিমধ্যেই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা দারিদ্র্য ও শোষণের চক্রকে স্থায়ী করেছে।

খ) চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সঙ্গে রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তুগুলির তুলনামূলক আলোচনা করো। তিনটির মধ্যে কোনটি কৃষকদের জন্য কম ক্ষতিকারক বলে তোমার মনে হয়? যুক্তি দিয়ে লেখো।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সাথে রায়তওয়ারি এবং মহলওয়ারি বন্দোবস্তগুলি হল বিভিন্ন ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা যা ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে, বিশেষ করে ঔপনিবেশিক সময়ে বাস্তবায়িত হয়েছে। কৃষকদের জন্য প্রতিটি সিস্টেমের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং প্রভাব রয়েছে। কৃষকদের জন্য কোনটি কম ক্ষতিকর তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, প্রতিটি সিস্টেমের বৈশিষ্ট্য এবং সম্ভাব্য পরিণতিগুলি বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে তিনটি সিস্টেমের একটি তুলনা:

 1. রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত:

  •  - রায়তওয়ারী পদ্ধতির অধীনে, স্বতন্ত্র চাষীরা জমির মালিক হিসাবে স্বীকৃত।
  •  - সরকারকে ভূমি রাজস্ব প্রদানের সরাসরি দায়িত্ব কৃষকদের।
  •  - তাদের জমির আকার এবং উত্পাদনশীলতার উপর ভিত্তি করে রাজস্ব মূল্যায়ন করা হয়।
  •  - জমির ব্যবহার, ফসল এবং অন্যান্য কৃষিকাজ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা কৃষকদের রয়েছে।
  •  - এই সিস্টেমটি কৃষকদের উচ্চতর মাত্রার স্বতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে।
  •  - এটি কৃষকদের জমির উন্নতিতে বিনিয়োগ করতে উত্সাহিত করতে পারে, কারণ তারা বর্ধিত উত্পাদনশীলতা থেকে সরাসরি উপকৃত হয়।
  •  - যাইহোক, যদি কৃষকরা উল্লেখযোগ্য ফসল ব্যর্থতা বা অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়, তারা একাই রাজস্ব প্রদানের বোঝা বহন করে।

 2. মহলওয়ারী বন্দোবস্ত:

  •  - মহলওয়ারী ব্যবস্থায়, রাজস্ব সংগ্রহ গ্রাম বা এস্টেট পর্যায়ে সংগঠিত হয়।
  •  - গ্রাম বা এস্টেট সরকারকে রাজস্ব প্রদানের জন্য দায়ী একটি যৌথ ইউনিট হিসাবে কাজ করে।
  •  - জমির মালিকানা সাধারণত গ্রামীণ সম্প্রদায়ের বা একজন জমির মালিকের যারা এটিকে পৃথক চাষীদের মধ্যে বিতরণ করে।
  •  - কৃষকদের জমি ব্যবহারের উপর সীমিত নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে এবং ফসল ও কৃষি পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
  •  - এই ব্যবস্থা গ্রামের মধ্যে সম্মিলিত দায়িত্ব এবং পারস্পরিক সমর্থনের বোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
  •  - যাইহোক, যদি গ্রামটি পর্যাপ্ত রাজস্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হয়, তবে পৃথক কৃষকরা এখনও আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।

 3. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত:

  •  - ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়েছিল এবং একটি বর্ধিত সময়ের জন্য, সাধারণত 30 বছরের জন্য রাজস্ব হার নির্ধারণ করা জড়িত ছিল।
  •  - নিষ্পত্তির সময় রাজস্বের হার অপরিবর্তিত ছিল, কৃষকদের স্থিতিশীলতা প্রদান করে।
  •  - জমির মালিক বা মধ্যস্থতাকারীরা ভাড়া আদায়কারী হিসাবে কাজ করত এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের জন্য দায়ী ছিল।
  •  - এই ব্যবস্থা প্রায়ই জমির মালিকদের শোষণমূলক অনুশীলনের দিকে পরিচালিত করে, যারা কৃষকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করত।
  •  - কৃষকদের জমি ব্যবহারের উপর সীমিত নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং তারা প্রায়ই নিপীড়নমূলক অবস্থার শিকার হতো।
  •  - বন্দোবস্তের স্থায়ীত্বের অর্থ হল কৃষকদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ে রেট পুনর্বিবেচনা বা ত্রাণ চাওয়ার জন্য সামান্য অবলম্বন ছিল।

 উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে রায়তওয়ারী বন্দোবস্ত ব্যবস্থা কৃষকদের জন্য সবচেয়ে কম ক্ষতিকর বলে মনে হয়। এটি স্বতন্ত্র কৃষকদের একটি উচ্চ স্তরের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করে, যাতে তারা জমি ব্যবহার এবং চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই স্বায়ত্তশাসন কৃষকদের তাদের জমিতে বিনিয়োগ করতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে উন্নতি করতে পারে। বিপরীতে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তগুলি আরও শোষণমূলক হতে থাকে, জমির মালিকরা তাদের অবস্থানের সুযোগ নিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে উচ্চ ভাড়া আদায় করে। মহলওয়ারী বসতি, সম্মিলিত দায়বদ্ধতার অনুভূতি জাগিয়ে, গ্রামটি পর্যাপ্ত রাজস্ব তৈরি করতে ব্যর্থ হলে পৃথক কৃষকদের এখনও অরক্ষিত রাখতে পারে।

 যাইহোক, এটা লক্ষণীয় যে কোনো ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার প্রভাব নির্দিষ্ট বাস্তবায়ন, আর্থ-সামাজিক কারণ এবং কৃষকদের জন্য উপলব্ধ সামগ্রিক কৃষি সহায়তা এবং অবকাঠামোর উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। একটি নির্দিষ্ট নিষ্পত্তি ব্যবস্থার সম্ভাব্য ক্ষতি বা সুবিধাগুলি মূল্যায়ন করার সময় এই দিকগুলি বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ।

গ) কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের সঙ্গে কৃষক-অসন্তোষ ও বিদ্রোহের কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল? সেই নিরিখে ‘দাক্ষিণাত্যের হাঙ্গামা কে তুমি কীভাবে বিচার করবে?

কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ প্রায়ই কৃষকদের অসন্তোষ এবং বিদ্রোহের সাথে যুক্ত হয়েছে।  উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করার সময়, বাণিজ্যিকীকরণের ফলে উদ্ভূত গতিশীলতা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।  এই প্রসঙ্গে, আসুন কৃষক-অসন্তোষ, বিদ্রোহ এবং দক্ষিণে কোলাহলের মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করা যাক:

 1. অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন:

  •  - কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের মধ্যে অর্থকরী ফসলের চাহিদা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক বাজারে কৃষি পণ্যের একীকরণ দ্বারা চালিত জীবিকা চাষ থেকে বাজার-ভিত্তিক উৎপাদনে স্থানান্তর জড়িত।
  •  - কৃষক যারা ঐতিহ্যগতভাবে জীবিকা নির্বাহের উপর নির্ভরশীল ছিল তারা নতুন অর্থনৈতিক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে।
  •  - বাজারের জন্য অর্থকরী ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তা তাদেরকে তাদের জমি এবং সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এই ফসলের জন্য বরাদ্দ করতে বাধ্য করে, যা খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বয়ংসম্পূর্ণতাকে সম্ভাব্যভাবে প্রভাবিত করে।
  •  - জমির মালিকানার ধরণে পরিবর্তন এবং কৃষি অর্থনীতিতে মধ্যস্থতাকারীদের সম্পৃক্ততা সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

 2. বাজারের চাপ এবং দুর্বলতা:

  •  - বাণিজ্যিকীকরণের তীব্রতা প্রায়ই সম্পদ এবং বাজারে প্রবেশাধিকারের জন্য কৃষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করে।
  •  - বাজারের ওঠানামা এবং মূল্যের অস্থিরতা কৃষকদের অর্থনৈতিক ধাক্কার জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে, যা তাদের আয় এবং জীবিকার স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করে।
  •  - আয় বৃদ্ধির জন্য অর্থকরী ফসলের উপর নির্ভরতা কৃষকদের বাজারের ঝুঁকির সম্মুখীন করে, যার মধ্যে মূল্য ক্র্যাশ, ভোক্তাদের পছন্দের পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতি সহ।
  •  - অর্থকরী ফসলে বিনিয়োগের জন্য ঋণ নেওয়ার কারণে বা আয়ের ওঠানামা মোকাবেলা করার কারণে কৃষক ঋণগ্রস্ত হতে পারে, যা ঋণ ও দারিদ্রের চক্রের দিকে নিয়ে যায়।

 3. রাষ্ট্রীয় নীতি এবং কৃষি দ্বন্দ্ব:

  •  - জমির মেয়াদ, কর, এবং বাণিজ্যিকীকরণ সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় নীতিগুলি কৃষকদের অসন্তোষ এবং বিদ্রোহে অবদান রাখতে পারে।
  •  - অন্যায্য কর নীতি বা উচ্চ ভূমি রাজস্ব দাবি কৃষকদের উপর অত্যধিক আর্থিক বোঝা চাপতে পারে।
  •  - ভূমি বিচ্ছিন্নতা, হয় বড় মাপের বাণিজ্যিক চাষ বা জমি দখলের মাধ্যমে, কৃষকদের বাস্তুচ্যুত করতে পারে এবং প্রতিরোধকে উস্কে দিতে পারে।
  •  - মধ্যস্থতাকারী, মহাজন, বা জমিদারদের দ্বারা শোষণমূলক অনুশীলন, যারা রাষ্ট্রের সাথে যোগসাজশ করতে পারে, অভিযোগ এবং প্রতিরোধকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

 দক্ষিণে কোলাহল সম্পর্কে, একটি ব্যাপক রায় প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট প্রাসঙ্গিক তথ্যের প্রয়োজন হবে।  তবে, কৃষক-অসন্তোষ এবং বিদ্রোহের উপর বাণিজ্যিকীকরণের প্রভাবের দৃষ্টিকোণ থেকে, নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করা যেতে পারে:

 1. বাণিজ্যিকীকরণের ডিগ্রী: 

এই অঞ্চলে কতটা বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে এবং কীভাবে এটি ঐতিহ্যগত কৃষি পদ্ধতিকে প্রভাবিত করেছে তা মূল্যায়ন করুন।  বাণিজ্যিকীকরণ প্রক্রিয়া যত বেশি আকস্মিক এবং বিঘ্নিত হবে, অসন্তোষ এবং প্রতিরোধের সম্ভাবনা তত বেশি।

 2. আর্থ-সামাজিক অবস্থা: 

দক্ষিণের কৃষকদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিশ্লেষণ করুন, যার মধ্যে রয়েছে ভূমি বন্টন, ঋণের অ্যাক্সেস, বাজারের সুযোগ এবং আয়ের বৈষম্য।  এই জাতীয় কারণগুলি অসন্তোষের স্তর এবং বিদ্রোহের সম্ভাবনাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

 3. অভিযোগ এবং সংহতি: 

কৃষকদের নির্দিষ্ট অভিযোগ এবং তাদের সমষ্টিগতভাবে সংগঠিত করার ক্ষমতা মূল্যায়ন করুন।  এর মধ্যে অন্যায্য কর, ভূমি বিরোধ, মধ্যস্থতাকারীদের দ্বারা শোষণ, বা অপর্যাপ্ত সরকারি সহায়তার মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

 4. দমনমূলক ব্যবস্থা: 

গর্জনে রাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করুন।  যদি রাষ্ট্র কৃষকদের অন্তর্নিহিত উদ্বেগের সমাধান না করে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে তা উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বিদ্রোহ বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

 সংক্ষেপে, দক্ষিণে গোলমালের প্রেক্ষাপট এবং গতিশীলতা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়াই একটি নির্দিষ্ট রায় প্রদান করা চ্যালেঞ্জিং।  যাইহোক, কৃষক-অসন্তোষ, বিদ্রোহ এবং কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করলে অস্থিরতার কারণ হতে পারে এমন কারণগুলির অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করতে পারে।

ঘ) বাংলার বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্যনীতির কী ধরনের সম্পর্ক ছিল ? কেন দেশীয় ব্যাঙ্ক ও বিমা কোম্পানি তৈরি করেন ভারতীয়রা ?

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য নীতি বাংলার বস্ত্র শিল্পে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। এখানে কোম্পানির বাণিজ্য নীতি এবং টেক্সটাইল শিল্পের মধ্যে সম্পর্কের একটি ওভারভিউ, সেইসাথে ভারতীয়দের দেশীয় ব্যাঙ্ক এবং বীমা কোম্পানিগুলি তৈরি করার কারণগুলি রয়েছে:

 1. বাংলার টেক্সটাইল শিল্পের উপর প্রভাব:

  •  - ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি টেক্সটাইল বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নীতি বাস্তবায়ন করেছিল। তারা ভারতীয় বস্ত্রের উৎপাদন ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল, বিশেষ করে বাংলা থেকে, নিজেদের মুনাফা বাড়াতে।
  •  - কোম্পানির বাণিজ্য নীতিতে ভারতীয় টেক্সটাইলের উচ্চ শুল্কের মতো বিভিন্ন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা তাদের ইউরোপীয় বাজারে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।
  •  - কোম্পানিটি ভারতে কাঁচামাল যেমন তুলার উৎপাদনকে উৎসাহিত করেছে, পাশাপাশি স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতার বিকাশকে নিরুৎসাহিত করেছে। এটি বাংলায় বস্ত্র শিল্পের বৃদ্ধিকে আরও ক্ষুণ্ন করে।
  •  - কোম্পানির নীতির ফলে দেশীয় বস্ত্র উৎপাদন কমে যায় এবং দক্ষ তাঁতিদের স্থানচ্যুত হয়, যার ফলে বাংলায় অর্থনৈতিক সঙ্কট ও সামাজিক উত্থান ঘটে।

 2. দেশীয় ব্যাংক সৃষ্টি:

  •  - ব্রিটিশদের শোষণমূলক অর্থনৈতিক অনুশীলন এবং আর্থিক স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে ভারতীয়রা দেশীয় ব্যাঙ্কগুলি তৈরি করেছিল।
  •  - ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি, বাণিজ্য এবং অর্থের উপর তার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, ভারতীয় অর্থনীতিতে একটি দমবন্ধ ছিল। ভারতীয় বণিক এবং উদ্যোক্তারা ক্রেডিট এবং আর্থিক পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল৷
  •  - দেশীয় ব্যাঙ্কগুলি ভারতীয় ব্যবসার জন্য অর্থায়নের একটি বিকল্প উৎস প্রদান করে, যাতে তারা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে পারে।
  •  - ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি শিল্প উদ্যোগ, বাণিজ্য এবং কৃষি কার্যক্রমের জন্য ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

 3. ভারতীয় বীমা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা:

  •  - ভারতীয়রা তাদের সম্পদ রক্ষা করতে এবং বাণিজ্য ও শিল্পের সাথে যুক্ত ঝুঁকি কমানোর জন্য দেশীয় বীমা কোম্পানি তৈরি করেছে।
  •  - ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত বীমা খাত প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশ ব্যবসায়ী এবং কোম্পানির স্বার্থে কাজ করত, ভারতীয় বণিক ও উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত কভারেজ ছাড়াই রেখেছিল।
  •  - ভারতীয় বীমা কোম্পানিগুলি ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রয়োজন অনুসারে বীমা পরিষেবা প্রদানের জন্য আবির্ভূত হয়েছে।
  •  - এই কোম্পানিগুলি অগ্নি, সামুদ্রিক দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য বিপদের মতো ঝুঁকিগুলির বিরুদ্ধে বীমা অফার করেছিল, নিশ্চিত করে যে ভারতীয় ব্যবসাগুলির প্রয়োজনীয় ঝুঁকি প্রশমনের সরঞ্জামগুলিতে অ্যাক্সেস রয়েছে৷

 4. অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং জাতীয়তাবাদ:

  •  - ভারতীয়দের দ্বারা দেশীয় ব্যাঙ্ক এবং বীমা সংস্থাগুলির প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক বিবেচনার দ্বারা চালিত হয় নি বরং জাতীয় গর্ব বোধ এবং স্বনির্ভরতার আকাঙ্ক্ষা দ্বারাও পরিচালিত হয়েছিল।
  •  - ভারতীয়রা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাহির করার একটি উপায় হিসাবে তাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার গুরুত্ব স্বীকার করেছে।
  •  - গার্হস্থ্য ব্যাঙ্ক এবং বীমা কোম্পানিগুলি ভারতীয় জনসংখ্যার জন্য অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হয়ে উঠেছে।

 সংক্ষেপে বলা যায়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য নীতি বাংলার বস্ত্রশিল্পের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছিল, যার ফলে এর পতন ঘটে। প্রতিক্রিয়া হিসাবে, ভারতীয়রা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত আর্থিক ব্যবস্থার উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এবং অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষাকে লালন করার জন্য দেশীয় ব্যাঙ্ক এবং বীমা কোম্পানিগুলি তৈরি করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি আর্থিক পরিষেবা প্রদানে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রচারে এবং অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলির উপর ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ঙ) ভারতে কোম্পানি-শাসন বিস্তারের প্রেক্ষিতে রেলপথ ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার বিকাশের তুলনামূলক আলোচনা করো।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে ভারতে কোম্পানির শাসনের বিস্তারে রেলওয়ে এবং টেলিগ্রাফ সিস্টেমের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  আসুন নিম্নলিখিত বিষয়গুলির সাথে কোম্পানির শাসনের প্রেক্ষাপটে তাদের প্রভাব তুলনা করি:

 1. রেলওয়ে:

  •  - ভারতে রেলপথ নির্মাণ 19 শতকের মাঝামাঝি শুরু হয়েছিল এবং ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ত্বরান্বিত হয়েছিল।
  •  - রেলওয়েগুলি মূলত ব্রিটিশ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক স্বার্থের জন্য নির্মিত হয়েছিল, বিশাল ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে পণ্য ও সৈন্য পরিবহনের সুবিধার্থে।
  •  - রেলওয়ে ব্রিটিশদের এই অঞ্চলের উপর আরও ভাল নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে, তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং যেকোনো প্রতিরোধ বা বিদ্রোহ দমন করতে দ্রুত সৈন্য মোতায়েন করতে সক্ষম করে।
  •  - রেলওয়ে ব্রিটিশ আধিকারিকদের চলাচলের সুবিধাও দেয়, কোম্পানি শাসনের অধীনে বিশাল অঞ্চলগুলির আরও দক্ষ শাসন ও প্রশাসনকে সক্ষম করে।
  •  - রেলওয়ে ভারতের অভ্যন্তরে এবং রপ্তানি উভয় ক্ষেত্রেই নতুন বাজার উন্মুক্ত করেছে, যা ব্রিটিশদের ভারতের সম্পদ শোষণ করতে এবং আরও সমন্বিত ঔপনিবেশিক অর্থনীতির বিকাশের অনুমতি দেয়। 
  • - রেলওয়ে দ্বারা সরবরাহিত পরিবহন পরিকাঠামো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিকে একত্রিত করতে সাহায্য করেছিল, ভারতে তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও বেশি করে।

 2. টেলিগ্রাফ সিস্টেম:

  •  - ভারতে টেলিগ্রাফ সিস্টেমের প্রবর্তন 19 শতকে যোগাযোগে বিপ্লব ঘটায়।
  •  - সারা দেশে টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপন করা হয়েছিল, প্রধান শহরগুলি, প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলি এবং সামরিক ফাঁড়িগুলির সাথে সংযোগ স্থাপন করেছিল।
  •  - টেলিগ্রাফ দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য যোগাযোগ সক্ষম করে, ব্রিটিশদের দ্রুত আদেশ, নির্দেশাবলী এবং তথ্য বিশাল দূরত্ব জুড়ে প্রেরণ করতে দেয়।
  •  - এই যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রশাসন এবং সামরিক ক্রিয়াকলাপগুলির কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয়কে সহজতর করে, কোম্পানির শাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
  •  - টেলিগ্রাফ অস্থিরতা সম্পর্কে তথ্যের দ্রুত প্রচার এবং বিদ্রোহ দমন করার জন্য দ্রুত বাহিনী মোতায়েনকে সহায়তা করে ভিন্নমত ও বিদ্রোহ দমনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
  •  - এটি ব্রিটিশদের স্থানীয় শাসক এবং প্রতিরোধ আন্দোলনের উপর একটি কৌশলগত সুবিধা প্রদান করেছিল, কারণ তারা আরও কার্যকরভাবে যোগাযোগের চ্যানেলগুলি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

 যদিও রেলওয়ে এবং টেলিগ্রাফ সিস্টেম উভয়ই ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির স্বার্থে কাজ করেছিল, সেখানে কিছু বিপরীত উপাদান ছিল:

  1.  - রেলওয়ের অর্থনীতিতে আরও প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল, পণ্য, সম্পদ এবং জনগণের চলাচল সহজতর করে, যা ব্রিটিশ অর্থনৈতিক আধিপত্যকে সুসংহত করতে অবদান রেখেছিল।
  2.  - টেলিগ্রাফ প্রাথমিকভাবে ব্রিটিশদের প্রশাসনিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ উন্নত করে, তাদের যোগাযোগের দক্ষ উপায় সরবরাহ করে এবং ভিন্নমতের দ্রুত দমনকে সক্ষম করে।

 সামগ্রিকভাবে, ভারতে কোম্পানি শাসনের অধীনে রেলওয়ে এবং টেলিগ্রাফ সিস্টেমের বিকাশের সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণকে সুসংহত করা এবং তাদের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক আধিপত্যকে সহজতর করা।  রেলওয়ে একটি সমন্বিত ঔপনিবেশিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যখন টেলিগ্রাফ সিস্টেম যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং ব্রিটিশ প্রশাসন ও সামরিক বাহিনীর কেন্দ্রীভূত নিয়ন্ত্রণকে শক্তিশালী করেছে।

Tags:
Next Post Previous Post