খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে পাল-প্রতিহার-রাষ্ট্রকূট ত্রিশক্তি সংগ্রাম কি ছিল? সম্পূর্ণ একটি টীকা

হর্ষবর্ধনের মৃত্যুতে (৬৪৭ খ্রিস্টাব্দ) আর্যাবতে রাজনৈতিক শূন্যতা দেখা দিলে বাংলার পাল বংশ, মালবের গুর্জর প্রতিহার বংশ ও দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশ আর্যাবর্তে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়। এই তিনটি আঞ্চলিক শক্তির দ্বন্দ্ব ‘ত্রিশক্তি দ্বন্দ্ব' নামে পরিচিত। এই দ্বন্দ্ব প্রায় ২০০ বছর ধরে চলেছিল। তারই বিবরণ নিচে আলোচিত৷

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে ভারতবর্ষে তিনটি শক্তি বিশেষ প্রতিপত্তি শালী হয়ে ওঠে। এরা হলো বাংলার পাল বংশ, উত্তর-পশ্চিম ভারতের গুর্জর-প্রতিহার বংশ এবং দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট বংশ। এই তিনটি রাজবংশ প্রায় দেড়শো বছর ধরে এক শক্তিশালী সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিল। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এই সংগ্রাম ত্রিশক্তি সংগ্রাম নামে পরিচিত। এই সংগ্রামের বিবরণ বিস্তৃত ভাবে ও কালানুক্রমিক ভাবে পাওয়া যায় না। এই তিনটি রাজবংশের লেখাগুলিকে যথাযথভাবে বিশ্লেষণ করলে এগুলি থেকে ঘটনার মোটামুটি পরিচয় পাওয়া যায়।

পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সুশাসনে বাংলার শক্তি ও সমৃদ্ধি গড়ে উঠেছিল। তাঁর পুত্র ধর্মপাল সিংহাসনে আরোহণের পরেই আর্যাবর্তে সাম্রাজ্য স্থাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। তিনি মগধ জয় করে এলাহাবাদ পর্যন্ত তাঁর অধিকার প্রসারিত করেন। এ দিকে গুর্জর প্রতিহার বংশীয় রাজা বৎসরাজ ক্রমাগত পূর্বদিকে অগ্রসর হতে থাকেন। ফলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। কিছু দিনের মধ্যে রাষ্ট্রকূটরাজ এই সংঘর্ষে যোগদান করেন।

এই ত্রিশক্তি সংগ্রামকে একটি সাম্রাজ্যবাদী সংগ্রাম আখ্যা দেওয়া যায়। যুদ্ধে রাজবংশগুলির উদ্দেশ্য ছিল মূলত উত্তর ভারতে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপন করা। পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতের এই ত্রিভুজাকৃতি সংগ্রামের লক্ষ্য ছিল মধ্যদেশ, বিশেষত কনৌজ অধিকার করা। অষ্টম ও নবম শতাব্দীতে হর্ষের রাজধানী কনৌজকে ভারতের কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করা হতো। ঐতিহাসিক বার্নেট বলেছেন, ‘পশ্চিম এশিয়ার সামরিক জাতিগুলির কাছে যেমন ছিল ব্যাবিলন, টিউটন জাতি ও বর্বরদের কাছে যেমন ছিল রোম, সেরূপ অষ্টম ও নবম শতাব্দীর রাজবংশগুলির কাছে কনৌজ বা মহোদয়শ্রীর ওপর অধিকার ছিল মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব লাভের মানদণ্ড।

গাঙ্গেয় দোয়াবে ধর্মপাল ও বৎসরাজ প্রথম যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। প্রতিহারদের লেখ অনুসারে বৎসরাজ এই যুদ্ধে জয়লাভ করেন। কোনও কোনও ঐতিহাসিকের মতে, বৎসরাজ বাংলা পর্যন্ত অগ্রসর হন এবং এই অঞ্চল দখল করেন। তবে এই মত যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। কারণ যে পৃথ্বীরাজ বিজয় কাব্যে বৎসরাজের বঙ্গবিজয়ের কথা বর্ণিত হয়েছে, সেটি অনেক পরবর্তী কালের রচনা।

কিন্তু বৎসরাজের কাছে পরাজিত হলেও এই সময় ধর্মপালের কোনও ক্ষতি হয়নি। কারণ উত্তর ভারতে বৎসরাজের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দক্ষিণ ভারতে রাষ্ট্রকূটরাজ ধ্রুব অত্যন্ত ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন এবং তিনি বৎসরাজের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় গোবিন্দের রাধনপুর ও ওয়ানি লেখ থেকে জানা যায় যে বৎসরাজ ধ্রুবের হাতে পরাস্ত হয়ে রাজস্থানের মরুভূমিতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বৎসরাজকে পরাজিত করে ধ্রুব দোয়াব অঞ্চলে উপস্থিত হন এবং বারাণসী প্রয়াগ ও মগধ জয় করে ধর্মপালকে পরাস্ত করেন। সঞ্জন লেখতে ধ্রুবের এই বিজয়কাহিনি লিপিবদ্ধ আছে।

অবশ্য ধ্রুবের বিজয় স্থায়ী হয়নি এবং ধর্মপালের রাজত্বে এটি খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই সময় দক্ষিণ ভারতে গোলযোগ উপস্থিত হওয়ায় রাষ্ট্রকূটরাজ দ্রুত উত্তর ভারত পরিত্যাগ করেন। এতে ধর্মপালের পক্ষেই লাভ হয়েছিল বেশি, কারণ রাষ্ট্রকূটরাজের হাতেই প্রতিহার সলরাজ চরম ভাবে পরাস্ত হওয়ায় ধর্মপালের পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের পথ প্রশস্ত হয়েছিল।

ধর্মপাল কালক্রমে সমগ্র আর্যাবর্ত জয় করে নিজের আধিপত্য স্থাপন করেন। এই সময় তিনি কনৌজের রাজা ইন্দ্রায়ুধকে পরাজিত করে মহোদয় অর্থাৎ কনৌজ অধিকার করেন এবং তার মনোনীত চক্রায়ুধকে সেখানকার সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ভাগলপুর ও মুঙ্গের লেখ থেকে জানা যায় যে ধর্মপাল তার বিজয় অভিযানে কনৌজ অতিক্রম করে আরও পশ্চিমে অগ্রসর হন এবং সিন্ধু ও পাঞ্জাবের প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলি দখল করেন।

ধর্মপালের সামরিক সাফল্যের বিবরণ পাওয়া যায় খালিমপুর তাম্রলেখতে। এতে বলা হয়েছে যে ধর্মপাল মহা আড়ম্বরে কান্যকুব্জের রাজাকে সিংহাসনে। প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক সভার আয়োজন করেছিলেন। এই সভায় উপস্থিত হয়ে ভোজ, মৎস্য, মদ্র, কুরু, যদু, যবন, অবন্তী, গান্ধার ও কির অঞ্চলের রাজন্যবর্গ ধর্মপালকে অধিরাজ বলে স্বীকার করেন। এই রাজ্যগুলির সবকটির অবস্থান সঠিক ভাবে নির্ণয় না করা গেলেও এ কথা সহজেই অনুমান করা যায়। যে ধর্মপাল প্রায় আর্যাবর্তের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনে সমর্থ হয়েছিলেন।

৮০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিহাররাজ বৎসরাজের মৃত্যু হলে তাঁর পুত্র দ্বিতীয় নাগভট্ট সিংহাসন আরোহণ করেন। তিনি ধর্মপালের এই সার্বভৌমত্ব মেনে নিতে পারেননি। তিনি প্রথমে সিন্ধু, অন্ধ্র, বিদর্ভ ও কলিঙ্গের রাজার সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং তার পরে তাঁর শত্রুর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। তিনি প্রথমেই কনৌজ আক্রমণ করে চক্রায়ুধকে পরাস্ত করেন এবং তাঁকে পলায়নে বাধ্য করেন। ভোজের গোয়ালিয়র প্রশস্তি-তে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। নাগভট্টের — সামন্তরাজগণ যে তাকে ধর্মপালের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন তা জানা যায় এই সব সামন্ত রাজাদের লেখ থেকে।

কিন্তু এই সময়ে রাষ্ট্রকূটরাজ তৃতীয় গোবিন্দ উত্তর ভারতে উপস্থিত হয়ে নাগভট্টকে চরম ভাবে পরাস্ত করেন। এই ঘটনা জানা যায় সঞ্জন লেখ থেকে। এই লেখতে আরও বলা হয়েছে যে ধর্মপাল ও চক্রায়ুধ উভয়েই গোবিন্দের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। অনেকে মনে করেন যে ধর্মপাল নাগভট্টের বিরুদ্ধে গোবিন্দের সাহায্যে চেয়েছিলেন। কিন্তু গোবিন্দ কিছু দিনের মধ্যেই উত্তর ভারত ত্যাগ করে নিজ রাজ্যে চলে যান এবং ধর্মপাল তার সাম্রাজ্য পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। আর্যাবর্তে ধর্মপালের আর কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তিনি অবশিষ্ট জীবন শান্তিতে রাজত্ব করার সুযোগ পান।

দেবপালের সমসাময়িক প্রতিহাররাজ ছিলেন দ্বিতীয় নাগভট্ট, রামভদ্র ও প্রথম ভোজ। মন্ত্রী দণ্ডপাণির নীতি-কৌশলে দেবপাল হিমালয় থেকে বিন্ধ্য পর্বত এবং পূর্বে ও পশ্চিমে সমুদ্র পর্যন্ত ভূভাগ জয় করতে সমর্থ হন বলে একটি লেখতে বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, দেবপাল উৎকল ধ্বংস, হুন গর্ব খর্ব এবং দ্রাবিড় ও গুর্জরদের দর্পচূর্ণ করে দীর্ঘকাল পর্যন্ত আসমুদ্র পৃথিবী ভোগ করেন। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রকূট রাজ্যের হস্তে প্রতিহাররাজ দ্বিতীয় নাগভট্ট পরাজিত হওয়ার ফলে প্রতিহার শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং দেবপাল এই সুযোগে পশ্চিমে নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।

নাগভট্টের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রামভদ্র সিংহাসনে আরোহণ করেন। তাঁর আমলেও পাল-প্রতিহার দ্বন্দ্ব অব্যাহত ছিল। সম্ভবত দেবপাল তাঁর রাজ্য পুনরায় আক্রমণ করেন। পরবর্তী প্রতিহার রাজ প্রথম ভোজ দেবপালের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সাফল্য অর্জন করলেও শেষ পর্যন্ত তিনি দেবপালের কাছে পরাজিত হন এবং যতদিন দেবপাল জীবিত ছিলেন ততদিন তাঁর পক্ষে দেবপাল প্রতিহার বংশের তিন পুরুষের সঙ্গে সফল ভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উত্তর ভারতে পালদের রাজনৈতিক প্রাধান্য অক্ষুণ্ণ রাখতে সমর্থ হন।

পালরাজ নারায়ণ পালের রাজত্বকালে পুনরায় পাল প্রতিহার সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রতিহাররাজ ভোজ এই সময়ে আবার আর্যাবর্তে নিজ প্রাধান্য স্থাপনে উদ্যোগী হন। নারায়ণ পালের ন্যায় দুর্বল রাজার পক্ষে প্রতিহারদের অগ্রগতি রুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া রাষ্ট্রকূট রাজগণও দখল করেন। রাষ্ট্রকূটরাজ অমোঘবর্মের এক লেখতে উল্লেখ করা হয়েছে যে অঙ্গ, বঙ্গ ও মগধের অধিপতিগণ তার বশ্যতা স্বীকার করেন। দুই পরাক্রান্ত শক্তির বারংবার আক্রমণে নারায়ণ পাল বিব্রত হয়ে পড়েন। কলচুরি ও গুহিলট রাজাদের সহায়তায় ভোজ নারায়ণ পালকে গুরুতর রূপে পরাজিত করেন। ফলে পাল সাম্রাজ্যের একাংশের ওপর প্রতিহারগণের আধিপত্য স্থাপিত হয়।

ভোজের পুত্র মহেন্দ্র পাল পুনরায় পালরাজ্য আক্রমণ করে বিহার অঞ্চল অধিকার করেন। তারপর আরও অগ্রসর হয়ে তিনি উত্তর বাংলায় স্বীয় প্রভাব বিস্তার করেন। ৮৮৭–৯০৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে উৎকীর্ণ মহেন্দ্র পালের কয়েকটি লেখ বাংলা ও বিহারে পাওয়া গেছে।

নবম শতাব্দীর শেষ ভাগে পাল রাজ-পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির আক্রমণ এবং আভ্যন্তরীণ অশান্তির ফলে পাল সাম্রাজ্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে পাল রাজগণ আর্যাবর্ত ও দাক্ষিণাত্যের রাজবংশগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। বিগ্রহ পাল কলচুরি বংশের রাজকন্যা লজ্জাদেবীকে বিবাহ করেন। নারায়ণ পালের পুত্র রাজ্যপালের সঙ্গে রাষ্ট্রকূটরাজ জগত্তুঙ্গের কন্যা ভাগ্যদেবীর বিবাহ হয়। রাজত্বের শেষদিকে নারায়ণ পাল প্রতিহারদের বিতাড়িত করে পুনরায় বিহার ও বাংলায় স্বীয় প্রাধান্য স্থাপনে সমর্থ হন।

নারায়ণ পালের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রাজ্যপাল ও রাজ্যপালের পুত্র দ্বিতীয় গোপাল ক্রমান্বয়ে রাজত্ব করেন। রাজশাহি জেলার ভাতুরিয়া গ্রামের একটি শিলালেখ থেকে জানা যায় যে রাজ্যপাল বহু শত্রুকে জয় করেন এবং ম্লেচ্ছ, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, ওড্র, পাণ্ড্য, কর্নাট, লাট, সুত্ম, গুর্জর, কৃত ও চিনদেশীয় রাজগণ তাঁর আজ্ঞা শিরোধার্য করেন। এই বর্ণনায় অতিরঞ্জন থাকলেও এ কথা বলা যায় যে রাজ্যপালের আমলেও পাল-প্রতিহার সংঘর্ষ অব্যাহত ছিল।

রাজ্যপালের পুত্র দ্বিতীয় গোপালের জাজিলপাড়া তাম্রলিপ্ততে বলা হয়েছে যে তার সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলে মালয় উপত্যকায়, মরুদেশে ও হিমালয়ের অরণ্যে ভ্রমণ করে। মরুদেশের উল্লেখ থাকায় মনে হয় যে এই সময় পাল সৈন্যগণ মধ্য ভারত অতিক্রম করে রাজপুতানার সীমায় উপস্থিত হয়। তবে এই বর্ণনার সত্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না।

অবশ্য মোটামুটি ভাবে সিদ্ধান্ত করা যায় যে রাজ্যপাল ও দ্বিতীয় গোপাল নিরুদ্বেগে রাজত্ব করতে পেরেছিলেন। কারণ রাজ্যপালের রাজত্বের প্রারম্ভেই রাষ্ট্রকূ টরাজ ইন্দ্র কর্তৃক প্রতিহাররাজ মহীপাল পরাজিত হন। ইন্দ্র কনৌজ অধিকার করে লুণ্ঠন করেন এবং মহীপাল পলায়ন করেন কোনও মতে প্রাণ রক্ষা করেন। ঘটনাটি ঘটে সম্ভবত ৯১৬ খ্রিস্টাব্দে। এই বিপর্যয়ের ফলে প্রতিহার রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রাষ্ট্রকূট সংঘর্ষ স্তিমিত হয়ে পড়ে। 

এই মিত্রশক্তি সংগ্রামের পরিণতিতে তিনটি রাজ্যই সামরিক দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কনৌজ অধিকারের সংগ্রামে সর্বদা ব্যস্ত থাকার ফলে নৃপতিবর্গ নিজ নিজ আভ্যন্তরীণ শাসনের দিকটি উপেক্ষা করেছিলেন। এতে কেবল শাসন ব্যবস্থাই দুর্বল হয়ে পড়েনি, বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলিও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। তা ছাড়া যুদ্ধরত রাজগণ যুদ্ধের ব্যয়ভার বহনের জন্য রাজস্ব আদয়ের ব্যাপারে অত্যধিক চাপ দিয়েছিলেন, যার ফলে রাজ্যের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল এবং প্রজাবর্গের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। সবশেষে বলা যায় যে, সংগ্রামশীল রাজাদের ব্যস্ততার সুযোগে সামন্ত রাজাদের বিদ্রোহ ঘটে এবং উত্তর ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। আত্মক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত তিনটি রাজ্যের পতন ঘটেছিল একই সময়ে এবং মোটামুটি একই কারণে।
Tags:
Next Post Previous Post