মিশরকে নীলনদের দান বলার কারণ কি?

ইতিহাসের জনক গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস সর্বপ্রথম তাঁর 'ইতিবৃত্ত' গ্রন্থে মিশরকে নীলনদের দান বলে উল্লেখ করেছেন। পরবর্তীকালে অন্যান্য ঐতিহাসিক গবেষকও হেরোডোটাসের এই মতকে সমর্থন করেছেন।

উপত্যকা গঠনের দরুন 

আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে নীলনদ অনেক বেশি চওড়া ও গভীর ছিল। সেসময় বদ্বীপ অঞ্চলগুলিতে পলি, বালি, কাঁকর জমে সমতল উপত্যকা গঠিত হয়েছিল। এই উপত্যকা অঞ্চলগুলিতে বসতি নির্মাণ শুরু হলে সভ্যতার উন্মেষের প্রেক্ষাপট রচিত হয়। ঐতিহাসিক বি. জি. ট্রিগার এর মতে—সেই সময়ে মিশরের জনবসতিগুলি বন্যাবিধৌত অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল।

কৃষিজ উৎপাদনের কারণে

প্রতি বছর বর্ষার সময় নীলনদে বন্যা হত। বন্যার সময় নদীর দুই তীরে নদীবাহিত পলিমাটি সঞ্চিত হত। এর ফলে নদীর উভয় তীর কৃষিজ ফসল উৎপাদনের অনুকূল হয়ে ওঠে। সেসময়ে মিশরে গম, যব, ভুট্টা, তিসি, বিভিন্ন শাকসবজি উৎপাদিত হত। তাই বলা যায় মিশরকে শস্যশ্যামলা, সুজলা-সুফলারূপে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নীলনদের অবদান ছিল।

পশুপালনের সুবিধা

মিশরে নীলনদের উভয় তীরে পলিমাটি যুক্ত অঞ্চলে তৃণভূমি গড়ে ওঠে। এই সুবিস্তৃত তৃণভূমিতে পশুখাদ্যের জোগান ও পশুপালনের সুবিধা মেলে। ছাগল, ভেড়া, শূকর ও গোরু ছিল সেসময়ের প্রধান গৃহপালিত পশু। তাই বলা যায় নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলে জীবিকা হিসেবে পশুপালনের সুবিধা থাকায় সভ্যতার বিকাশ ঘটে।

পরিবহণের সুবিধা 

প্রাচীন মিশরে জলপথই ছিল পরিবহণের মূল মাধ্যম। নীলনদ যেহেতু সেসময় সমস্ত বদ্বীপ অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত ছিল তাই মিশরের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে নীলনদ ধরে যোগাযোগের সুবিধা মিলেছিল।

বহির্জনগোষ্ঠীর বসবাসের সুবাদে

এশিয়া থেকে সিমাইটগণ, আদিম ইউরোপীয় জনগোষ্ঠীভুক্ত লিবীয়গণ এবং আফ্রিকার উয় অঞ্চল থেকে আগত নুবীয়গণ নীলনদের তীরবর্তী অঞ্চলগুলিতে এসে বসবাস শুরু করে। বিভিন্ন বহিঃসম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ একত্রে বসবাস করার সুবাদে এখানে নতুন এক সভ্যতার উন্মেষ ঘটে।

Tags:
Next Post Previous Post