ভারতীয় সংবিধান ও তার প্রস্তাবনা | Indian Constitution And It's Preamble - Itihas Pathshala

সংবিধান বলতে বোঝায় কতকগুলি আইনের সমষ্টি। সেই আইন মোতাবেক কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান, তাই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সংবিধানের প্রয়োজন হয়।  সংবিধান একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

 প্রস্তাবনাকে ‘সংবিধানের বিবেক” বা ‘সংবিধানের আত্মা” বলা হয়। সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র' বলা হয়েছে।

ভারতীয় সংবিধানের প্রেক্ষাপট কী?


১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অগস্ট অনেক ক্ষয়ক্ষতি, দেশভাগ শেষে স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হলো। পলাশির যুদ্ধ থেকে ধরলে ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হলো ভারতবর্ষ। ফলে একদিকে ছিল মুক্তির আনন্দ। কিন্তু অন্যদিকে দেশভাগের যন্ত্রণা। নতুন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সামনে তখন অনেক সমস্যা। সেই সবের মধ্যেই কাজ করে চলেছিল সংবিধান সভা। বানানো হচ্ছিল স্বাধীন ভারতের জন্য সংবিধান। দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনার শেষে তৈরি হলো ভারতের সংবিধান। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গ্রহণ করা হলো সংবিধানটি। পরের বছরে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতে কার্যকর হলো সংবিধান।

ভারতীয় সংবিধান কী?


সংবিধান বলতে বোঝায় কতকগুলি আইনের সমষ্টি। সেই আইন মোতাবেক কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। রাষ্ট্র যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান, তাই রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সংবিধানের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রের নিরিখে সংবিধান হলো সেইসব আইনকানুন, যার দ্বারা সরকারের ক্ষমতা, নাগরিকদের অধিকার এবং সরকার নাগরিকদের সম্পর্ক পরিচালিত হয়। সংবিধান একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

ভারতবর্ষ যখন ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল তখন ব্রিটিশ সরকারের আইন মোতাবেক ভারত শাসন করা হতো। সেখানে ভারতীয়দের চাওয়া-পাওয়ার কোনো প্রতিফলন ঘটত না। তাই ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতীয় নেতৃবৃন্দ ভারতীয়দের জন্য একটি সংবিধান রচনার দাবি তুলতে থাকেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন সময়ে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে ভারতবাসীর কিছু কিছু দাবি মেনে নিলেও প্রশাসনের মূল নিয়ন্ত্রণ তারা নিজেদের হাতেই রেখেছিল।

তবে ক্রমাগত আন্দোলনের চাপে ভারতবাসীর স্বাধীনতা ও সংবিধানের দাবিকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে তাই ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার একটি সংবিধান সভা গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ঐ সভার কাজ হবে ভারতের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে গণপরিষদ গঠিত হয়। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ গণপরিষদের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হন। স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনার জন্য একটি খসড়া কমিটি গঠিত হয়। বি. আর. আম্বেদকরের সভাপতিত্বে সাতজনের খসড়া কমিটি সংবিধান রচনার কাজটি করেছিল।

সাধারণতন্ত্র দিবস বলতে কী বোঝায়?


১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি থেকে ভারতকে সাধারণতন্ত্রবলে ঘোষণা করা হয়। তাই ঐ দিনটিতে সাধারণতন্ত্র দিবস পালিত হয়। ভারতবর্ষের সংবিধান বিশ্বের সবথেকে বড়ো সংবিধান। বিভিন্ন দেশের সংবিধানের শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলি ভারতের সংবিধানে গ্রহণ করা হয়েছে৷ যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের থেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, ইংল্যন্ডের থেকে মন্ত্রীসভা পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা, আয়ারল্যন্ডের থেকে নির্দেশমূলকনীতি ইত্যাদি ।

ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা কী?


ভারতীয় সংবিধানের একটি প্রস্তাবনা রয়েছে। সংবিধানের আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রস্তাবনায় ঘোষণা করা হয়েছে। প্রস্তাবনাকে ‘সংবিধানের বিবেক” বা ‘সংবিধানের আত্মা” বলা হয়। সংবিধানের মূল প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি ‘সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র' বলা হয়েছে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীতে ‘সমাজতান্ত্রিক’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ' এই আদর্শদুটি যুক্ত করে ভারতকে ‘সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র' বলা হয়েছে। এই শব্দগুলির প্রত্যেকটির গভীর তাৎপর্য রয়েছে।

১) সার্বভৌম

সার্বভৌম বলতে বোঝায় ভারতরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে চরম বা চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। বিদেশি কোনো রাষ্ট্র বা সংস্থার আদেশ, নির্দেশ বা অনুরোধ ভারত মানতে বাধ্য নয়।

২) সমাজতন্ত্র

সমাজতন্ত্র বলতে সাধারণত উৎপাদনের উপকরণগুলির ওপর রাষ্ট্র তথা সমাজের মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং উৎপাদিত সম্পদের সমান ভাগকে বোঝায়। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমাজতান্ত্রিক শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে অন্য অর্থে। সেখানে মিশ্র অর্থনীতি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানা-নির্ভর অর্থনীতির মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।

আরো জানতে

৩) ধর্মনিরপেক্ষ

ধর্মনিরপেক্ষ বলতে বোঝানো হয়েছে ভারত রাষ্ট্রের নিজস্ব কোনো ধর্ম নেই। বিশেষ কোনো ধর্মের হয়ে কথা বলা বা বিরোধিতা করা কোনোটাই রাষ্ট্র করবে না। প্রত্যেক নাগরিক তাঁর নিজের বিশ্বাসমতো ধর্মাচরণ করতে পারবেন।

৪) গনতান্ত্রিক

ব্যাপক অর্থে গণতন্ত্র বলতে সামাজিক-অর্থনৈতিক রাজনৈতিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে সমতা প্রতিষ্ঠার কথা বোঝায়। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানে গণতন্ত্র বলতে মূলত প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার বোঝানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ভোট দিয়ে কেন্দ্র ও প্রদেশগুলির আইনসভায় এবং বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে।

৫) প্রজাতন্ত্র

সাধারণতন্ত্র বলতে বোঝায় ভারতের শাসনব্যবস্থায় বংশানুক্রমিক কোনো রাজা বা রানির স্থান নেই। ভারতীয় শাসনব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি। তিনিও ভারতের জনগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয় শাসনতন্ত্রের উৎস ও রক্ষক ভারতীয় জনগণ। সেজন্য ভারতীয় সংবিধানে সাধারণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার হয়েছে।




Tags:
Next Post Previous Post